সাতক্ষীরার শ্যামনগর থানার সোরা গ্রামের ফজলুর করিমের বাড়িতে হামলা ও লুটের ঘটনায় হাইকোর্টে রিট আবেদনের ওপর একদিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। রিটের পরবর্তী শুনানির আগেই মামলা নিতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)।
গতকাল রোববার (৭ এপ্রিল) রিট শুনানির নির্ধারিত দিনে আদালতকে এ তথ্য জানানোর পর রিট আবেদন প্রত্যাহার করে নেন সংশ্লিষ্ট আইনজীবী। বিষয়টির ওপর শুনানির পর রোববার বিকালে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রিট আবেদনটি উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করে দেন।
এর আগে, গত ২ এপ্রিল একই আদালত মামলা না নিয়ে সালিশ বৈঠকে বসার অভিযোগ শুনে ঊষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। সেদিন আদালত বলেছিলেন, ওসি মামলা নিলেন না কেন? তারা কি সালিশ করতে বসেছেন?
‘সুবিধা মতো হলে মামলা নেবেন, অথচ টাকা ছাড়া থানায় একটা জিডিও হয় না।’ আদালত আরও বলেন, ‘১৩ হাজার পুলিশ, যারা থানায় বসেন, তাদের জন্য গোটা পুলিশের বদনাম হতে পারে না।’
আদালত বলেন, ‘অনেক পুলিশ সদস্য খুব কষ্ট করে জীবন-যাপন করেন। আবার কারও কারও ৪/৫টি বাড়ির কথা শুনি। দেশটা কি চোরের দেশ হয়ে গেছে?’
এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ সাইফুল আলম আদালতকে জানান, গত ২ এপ্রিল থানা মামলা নিয়েছে। এ সময় তিনি মামলার এজাহারের কপি আদালতে প্রদর্শন করেন। একই সঙ্গে রিট আবেদনকারীর অভিযোগের বিষয়ে করা পৃথক একটি জিডির (সাধারণ ডায়েরি) তদন্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, রিট আবেদনকারীর বাড়িতে লুটপাটের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। তবে তার বাড়ির দেয়াল ভেঙে ফেলার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামসুল হক কাঞ্চন আদালতকে আরও বলেন, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ মামলা নেয়নি। এরপর রিট আবেদন করা হয়। ২ এপ্রিল ওই রিট আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এ তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ মামলা নেয়।
তবে মামলা গ্রহণের যে সময় উল্লেখ করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, মামলা শুনানির আগেই হয়েছে।
এ সময় আদালত বলেন, আপনারা মামলা নেয়ার আদেশ চেয়েছিলেন। মামলা হয়েছে। এখন কী করবেন?
আইনজীবী এ সময় বলেন, তাহলে নট প্রেসড, রিজেক্ট (উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ) করেন। এরপর আদালত আদেশ দেন।
রিট আবেদনে অভিযোগ করা হয়, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১১টায় ইউসুফ আলীসহ কিছু লোক ফজলুর করিমের বাড়িতে হামলা চালায়। সে সময় তারা ফজলুর করিমকে মারধর করে নগদ দুই লাখ টাকা, ৮০ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার ও ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে। এ নিয়ে ওসির সাহায্য চাইলে তিনি সাহায্য করেনি। এরপর বিষয়টি কালিগঞ্জ সার্কেলের এএসপিকে ফোন করে জানান ফজলুর করিম। পাশাপাশি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে সাহায্য চান। এরপর একজন এএসআই ঘটনাস্থলে যান। এরই মধ্যে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওসি ফজলুর করিমের ওপর ক্ষিপ্ত হন ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারকে বিষয়টি জানানোয়। ওসি বিষয়টি নিয়ে মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং চেয়ারম্যানের সঙ্গে বসে আপস করতে বলেন।
ফজলুর করিম ওসির বিরুদ্ধে সাতক্ষীরা এসপির কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এসপি বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করতে ওসিকে নির্দেশ দেন। এরপরও ওসি ব্যবস্থা না নেওয়ায় গত ৩ মার্চ রিট আবেদন করেন ফজলুর করিম।
১০ মার্চ এ রিট আবেদনের ওপর শুনানি হয়। এদিন আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলকে অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মৌখিক নির্দেশ দেন। ওই আইন কর্মকর্তা খোঁজখবর নিয়ে গত ২ এপ্রিল আদালতকে জানান, অভিযোগের আংশিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এরপরই আদালত উষ্মা প্রকাশ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার আবার বিষয়টি আদালতে উত্থাপিত হয়। পরে রিট প্রত্যাহার করে নেন আইনজীবী।