প্রতিটি পরিবার বাচ্চাদের কোলে নিয়ে ছবি তোলে স্মৃতি ধরে রাখার জন্য। কিন্তু আড়াই মাসের ছোট্ট শাওন যখন বড় হবে তখন বুঝবে কি কষ্টের একটা ছবি এটা। হয়তোবা শাওন প্রশ্ন করবে কি হয়েছিলো সেদিন…?
গতকাল বুধবার ( ১০ এপ্রিল) দুপুর ১২.৩০ টায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এনেক্স কোর্ট নং ১৭ বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম যখন লাভলী আক্তারকে ডাকলেন তখনও বোঝা যায়নি ছোট্ট শাওন বদলে দিতে যাচ্ছে আইনের একটি ধারা।
মায়ের কোলে দুধ খাচ্ছিলেন শাওন, মানবিক বিচারক তখন বললেন দুধ খাওয়ানো শেষ করে অন্য এক আইনজীবীর কোলে শাওনকে দিয়ে সামনে আসুন। আদালতে পিন পতন নীরবতা। ডায়াসে এসে লাভলী আক্তার বললেন তিনি তার স্বামীর বিরুদ্ধে আর মামলা চালাতেন চান না। ছোট্ট শিশুর দিকে তাকিয়ে তিনি এ সিদ্ধান্ত নিলেন।
এবার আরও আবেগঘন পরিবেশ তৈরী হলো। এবার মানবিক দুই বিচারকের চোখেও জল। ডাকা হলো বাবা শফিকুল ইসলামকে। তিনিও বললেন তার আর কোন অভিযোগ নেই। শাওনের বাবা শুধু বললেন, তারা এ মামলাটি আপোস করতে চেয়েও পারেননি। এবার আদালত আরও মানবিক হলেন।
সরকারকে সংশোধন করতে বলা হলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন। ওই নির্দেশ মোতাবেক আপোষের বিধান রেখে ওই আইনের যৌতুক সংক্রান্ত ১১(গ) ধারা ছয় মাসের মধ্যে সংশোধনের উদ্যোগ নিতে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও ড্রাফটিং উইংকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিতে বলেছে আদালত।
যৌতুক সংক্রান্ত এক মামলায় বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই রায় দেন। হাইকোর্ট বলেছে, আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকরা এই রায় অনুসরণ করে ১১(গ) ধারায় মামলার পক্ষগণকে আপোষের সুযোগ দেবেন।
আদালত বলেন, আমাদের আইনগুলো বজ্র আটুনি ফস্কা গেরোর মত। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আপোষের বিধান নেই। অথচ যৌতুকের মামলায় স্বামী ও স্ত্রী আপোষ করতে চাচ্ছে। কিন্তু আপোষের বিধান না থাকায় সাজা হচ্ছে।
চার লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী লাভলী আক্তার স্বামী মো. শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ২০১২ সালে মামলা করে। দু’জনের বাড়ি কিশোরগঞ্জের কটিয়াদিতে। এ মামলায় ২০১৪ সালের ১০ জুলাই আসামিকে তিন বছর সশ্রম কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে চট্টগ্রামের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
কিন্তু পলাতক থাকায় দুই বছর পর সাজার রায় বাতিল চেয়ে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে আবেদন করেন শফিকুল। হাইকোর্ট তাকে জামিন দেয় এবং সাজা কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।
রায় ঘোষণঅর দিন আড়াই মাস বয়সী সন্তানকে নিয়ে স্বামী-স্ত্রী হাইকোর্টে হাজির হন। উভয়ে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষরের পর আদালত বলেন, ভবিষ্যতে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপরই তিন বছরের সাজা বাতিল করে দেয় আদালত।
হাইকোর্ট বলেন, নানা কারনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য হতেই পারে। আর ঠুনকো অভিযোগে হাজার হাজার মামলা হচ্ছে। আইনে আপোষের বিধান থাকলে উচ্চ আদালত পর্যন্ত মামলা আসত না। মামলা জট রোধে আপোষের বিধান থাকা দরকার।
আদালতে বাদি-বিবাদীর পক্ষে হাসান মাহমুদ খান ও সামিউল হক এবং রাষ্ট্রপক্ষে ডিএজি ফরহাদ আহমেদ ও এএজি ইউসুুফ মাহমুদ মোর্শেদ শুনানি করেন। সূত্র : চ্যানেল২৪