রিমান্ডে থাকাকালে ভয় দেখিয়ে আসামির কাছ থেকে বসত বাড়িসহ ৬২ শতাংশ জমি ও তিনটি গাড়ি নেওয়া হয়েছে দাবি করে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হকসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
রাজধানীর ডেমরার সারুলিয়া এলাকার বড়ভাঙ্গ পশ্চিম টেংড়ার বাসিন্দা আব্দুল মতিনের স্ত্রী আফরোজা আক্তার আখি গত ৩ এপ্রিল এই অভিযোগ করেন।
ঢাকার মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে অভিযোগের বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষীদের জবানবন্দি নিতে বিচারক নির্ধারণের জন্য মঙ্গলবার মামলার নথি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জাহিদুল কবিরের কাছে পাঠানো হয়েছে।
আরজিতে অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হকের স্ত্রী ফারজানা মোজাম্মেল, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের রামনা জোনাল টিমের সদস্য দীপক কুমার দাস, নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ থানার ওসি মনিরুজ্জামান মনির, ডেমরার সাব-রেজিস্ট্রার আফছানা বেগম, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের অফিস সহকারী হানিফ আলী শেখ, ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক লিমিটেডের ঢাকার নয়াবাজার শাখার এক্সিকিউটিভ অফিসার সাজ্জাদুর রহমান মজুমদার, দলিল লেখক মো. জাকির হোসেন, জসিমদ্দিন, ইমরান হোসেন, আনন্দ হাউজিংয়ের পরিচালক চৌধুরী মো. জাবের সাদেক, নজরুল ইসলাম, এবিএম সিদ্দিকুর রহমান, খোরশেদ আলম, আব্দুর রহিম, তারিকুল মাস্টার, সিদ্ধার্থ, গনেশ, পলাশ ও সৈকতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘ঘটনা সাজিয়ে’ রাজধানীর শাহবাগ থানার ৪৩ (৭) ১৮ নম্বর মামলা করা হয়। পরে বাদীর স্বামী আব্দুল মতিন, শ্বশুর আলহাজ্জ মো. জাহের আলী ও ননদের জামাই আবু তাহেরকে গ্রেপ্তার করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম অদালতে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ।
বিচারক ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই জাহের আলীকে পাঁচ দিন এবং মতিন ও তাহেরকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন।
“ওই দিনই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীপক কুমার দাস তাদের আদালত থেকে রিমান্ডে নিয়ে যায়। পরে ২৬ জুলাই অথাৎ একদিন পরে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে আসমিরা পরস্পর যোগসাজশে সম্পত্তি আত্মসাত করার জন্য বাদীর শ্বশুরকে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় নিয়ে দুটি দলিল রেজিস্ট্রি করে নেয়। যার নম্বর-৫৩৬৭ তারিখ ২৬/০৭/২০১৮ এবং নম্বর ৯২২৬ তারিখ ২৬/০৭/২০১৮। এছাড়া ব্যাংকে বন্ধক রাখা পাওয়ার বাতিল করার জন্য নতুন পাওয়ার দলিল তৈরি করেন, যার নম্বর-৫৩৬৬ তারিখ ২৬/০৭/২০১৮। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই বাদীর স্বামীকে ডিবি পরিচয় দিয়ে কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা থেকে জোর করে তুলে নিয়ে চারটি দলিল রোজিস্ট্রি করে নেয়। এছাড়া ২০১৮ সালের ১১ জুলাই পুলিশ হেড কোয়ার্টারে মিটিংয়ের কথা বলে নিয়ে বাদীর শ্বশুর ও স্বামীকে চোঁখ বেধে নির্জন স্থানে আটক করে রেখে ৫টি দলিল সম্পাদন করে নেয় আসমিরা।”
এছাড়া ২০১৮ সালের ৩১ অগাস্ট নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের বক্তবড়ী এলাকায় তাদের বসতবাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তাদের গ্যারেজ থেকে তিনটি গাড়ি নেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
ওই গাড়ি তিনটি হল- ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৩-৯২৫১, ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৫-২৫২৮ ও ঢাকা মেট্রো-ঘ-৩৩-৪৬৫২। এছাড়া আসমিরা বিভিন্ন সাজানো মামলা দিয়ে বাদীর স্বামী, শ্বশুর ও ননদের স্বামীকে হয়রানি করার ঘটনায় আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয় বলে দাবি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মোজাম্মেল হক গণমাধ্যমকে বলেন, যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ঠিক নয়।
“মামলার বাদী আফরোজা আক্তারের শ্বশুর জাহার আলী একজন প্রতারক। পুলিশ সদস্যদের কল্যাণের জন্য গঠিত সমবায় সমিতির নামে বিভিন্ন আবাসিক প্রকল্পের জমি কেনার জন্য তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দায়িত্ব পালনকালে সে কোটি কোটি টাকাও নিয়েছে। কিন্তু সে যথাযথভাবে জমি বুঝিয়ে না দিয়ে নিজের বা পরিবারের অন্য সদস্যের নামে জমি করেছে।
“পুলিশের সাধারণ সদস্যরা প্রায় একশত কোটি টাকা দেওয়ার পরেও জমি না পাওয়ায় জাহার আলীকে চাপ দিলে সে আজ দিব কাল দিব বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সময় নিয়ে প্রায় দুই বছর অতিবাহিত করে। পরে সে সমঝোতার ভিত্তিতে তার এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা জমি পুলিশের সমবায় সমিতির নামে লিখে দেয়।”
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো বিষয় নেই। জাহার আলী সাধারণ পুলিশ সদস্যদের সাথে প্রতারণা করতে চেয়েছিল, যা না পেরে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।” সূত্র : বিডিনিউজ