সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে নুসরাত হত্যার মামলা ইচ্ছে করলে হাইকোর্ট বিভাগ জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিজেই নিষ্পত্তি করতে পারেন। ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের সঙ্গে আলাপকালে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম এই কথা জানিয়েছেন।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মামলাটিসহ এ জাতীয় মামলা ফার্স্ট ট্র্যাকে বিচার করার নির্দেশনা দেবেন বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন, মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির অন্য কোন উপায় আছে কি?
অ্যাডভোকেট তানজিম : মামলাটির ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে কোন কোন ধারায় অভিযোগপত্র দেয়া হবে তার উপর। এটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে বা দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে বিচার হতে পারে। তবে অবশ্যই এ ক্ষেত্রে আইনে যে নির্দিষ্ট সময়ে দেয়া আছে এর মধ্যেই শেষ করতে হবে। তবে এ নির্দিষ্ট সময়ে সম্পন্ন করা কি নির্দেশনামূলক না বাধ্যতামূলক তা নিয়ে ব্যাখা বিশ্লেষনে মতপার্থক্য থাকায় মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে গড়িমসি হয়।এজন্য যেহেতু আইনগত প্রশ্ন রয়েছে তাই এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে ইচ্ছে করলে হাইকোর্ট বিভাগ নিজেই নিষ্পত্তি করতে পারেন। এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫২৬ ধারা মতে ফৌজদারি মামলা স্থানান্তরের জন্য হাইকোর্টে দরখাস্ত করা হয়। এই বিধান মতে হাইকোর্ট বিভাগ মামলা স্থানান্তর করার আদেশ বা স্বয়ং বিচার করতে পারবেন।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: এ মামলা হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হওয়া কেন প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন এবং সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদে কি বলা আছে?
অ্যাডভোকেট তানজিম : হাইকোর্ট বিভাগ মামলা বিচার করলে তদন্ত প্রতিবেদনে গড়িমসি করার সাহস পাবেনা। এছাড়া হাইকোর্ট সম্প্রতি বলেছে যে তদন্তে গাফিলতি পেলে কোর্ট ইন্টারফেয়ার করবে। যেহেতু মামলাটি স্পর্শকাতর এবং জনগুরুত্বপূর্ণ তাই প্রধান বিচারপতি এ উদ্যোগ নিতে পারেন। প্রধান বিচারপতি হাইকোর্ট বিভাগে প্রয়োজনে আলাদা বেঞ্চও গঠন করে দিতে পারেন। এর ফলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।
আর সংবিধানের ১১০ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগের নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত বিভাগের কোন অধস্তন আদালতের বিচারাধীন কোন মামলায় এই সংবিধানের ব্যাখ্যা-সংক্রান্ত আইনের এমন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন বা এমন জনগুরুত্বসম্পন্ন বিষয় জড়িত রহিয়াছে, সংশ্লিষ্ট মামলার মীমাংসার জন্য যাহার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন, তাহা হইলে হাইকোর্ট বিভাগ উক্ত আদালত হইতে মামলাটি প্রত্যাহার করিয়া লইবেন এবং (ক) স্বয়ং মামলাটির মীমাংসা করিবেন; অথবা (খ) উক্ত আইনের প্রশ্নটির নিষ্পত্তি করিবেন এবং উক্ত প্রশ্ন সম্বন্ধে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের নকলসহ যে আদালত হইতে মামলাটি প্রত্যাহার করা হইয়াছিল, সেই আদালতে (বা অন্য কোন অধস্তন আদালতে) মামলাটি ফেরত পাঠাইবেন এবং তাহা প্রাপ্ত হইবার পর সেই আদালত উক্ত রায়ের সহিত সঙ্গতি রক্ষা করিয়া মামলাটির মীমাংসা করিতে প্রবৃত্ত হইবেন।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: আমাদের দেশে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মামলা পরিচালনার কোন নজির আছে কি?
অ্যাডভোকেট তানজিম : জ্বি, অবশ্যই আছে। সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদের ক্ষতিপূরণের মামলার বিচার হয়েছে উচ্চ আদালতে। ফলে নুসরাত হত্যা মামলার বিচারও হাইকোর্টে করা খুব সম্ভব। তবে এজন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হতে হবে। বিশেষ করে এটর্নী জেনারেলকে উদ্যোগী হতে হবে।