সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বন্ধে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদফতর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ১০১টি খাতে দুর্নীতি চিহ্নিত করেছে তারা। তবে দুর্নীতির উৎস হিসেবে চিহ্নিত এসব খাতের মধ্যে মাত্রটি ২৫টিতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, পর্যায়ক্রমে সব খাতেই অভিযান চলবে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৯০টি অভিযান চালানো হয়েছে। এসব অভিযানের সময় ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয় আর মামলা হয় ২২টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে সেবা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে এ বছরের গোড়ায় শুরু হয়েছে দুদকের এনফোর্সমেন্ট টিমের অভিযান। দুর্নীতির উৎস হিসেবে চিহ্নিত প্রায় সব খাতই সেবা খাত বলে জানিয়েছে দুদক।
জানা গেছে, সেবা খাতের দুর্নীতির সব অভিযোগ দুদক অভিযোগকেন্দ্র (হটলাইন ১০৬) আসে। ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই এই হটলাইন কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকেই মূলত দুর্নীতি প্রতিরোধে ‘এনফোর্সমেন্ট’ অভিযান শুরু হয়। তবে এ বছর ‘এনফোর্সমেন্ট’ অভিযান নতুন মাত্রা পাচ্ছে বলে জানিয়েছে দুদক।
দুদক বলছে, অর্থ মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৭৪টি খাত চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বাইরে যেসব খাতে দুর্নীতি হচ্ছে সেগুলো হলো রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), আইন মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, পরিবেশ, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ), বনবিভাগ, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয়, কারা হাসপাতাল, কারাগার, পাসপোর্ট অফিস, তিতাস গ্যাস, হাওরের জলমহাল, পল্লী বিদ্যুৎ, নদী, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক দফতর, সমাজসেবা অধিদফতর, সিবিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই), সেটেলমেন্ট অফিস, ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।
দুদক সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ১১টি খাতে দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছে তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৩৩টি খাতে দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে। বেবিচকের ১১ খাতে দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের আট খাতে মোটা অঙ্কের দুর্নীতি হচ্ছে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির খাত চিহ্নিত হয়েছে ১১টি।
দুদক কমিশনার ড. মো. মোজাম্মেল হক খান জানান, ২০১৭ সালে সরকারি প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ২৫টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করে দুদক। প্রতিটি টিমকে সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি, পরিচালনা পদ্ধতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ ও অপচয়ের দিক ও বিশ্লেষণ করে জনসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সফলতা ও সীমাবদ্ধতা, আইনি জটিলতা, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি ও দুর্নীতির কারণ চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।
দুদক কমিশনার বলেন, ‘সরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি বন্ধে নানা সুপারিশ করে তৈরি করা প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে জমা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি চলছে অভিযান।’ বাংলাট্রিবিউন