ব্যারিস্টার নেওয়াজ মোরশেদ। সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে লন্ডনের বিপিপি ইউনিভার্সিটি থেকে ফের অনার্স করেন। এরপর লন্ডনেই বার এট ল’ অর্থাৎ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ল’ বা পিজিডিএল (বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স বা বিপিটিসি এর জন্য) সম্পন্ন করেন এবং লিঙ্কনস ইন থেকে সনদ নেন। ব্যারিস্টারি পড়ার সুবিধা, বাংলাদেশ থেকে ব্যারিস্টারি পড়ার সুযোগসহ আরও কিছু প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে এই আইনজীবীর মুখোমুখি হয়েছিল ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের সহকারী সম্পাদক কাজি ফয়জুর রহমান।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ সাক্ষাৎকারে আপনাকে স্বাগত…
ব্যারিস্টার নেওয়াজ : ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের মতো স্বনামধন্য সংবাদ মাধ্যমে আমাকে কথা বলার সুযোগ প্রদানের জন্য ধন্যবাদ।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আপনি তো একজন ব্যারিস্টার, আপনার কাছে প্রথম জিজ্ঞাসা ব্যারিস্টারি পড়ার গতানুগতিক পদ্ধতি কি?
ব্যারিস্টার নেওয়াজ : ব্যারিস্টার হওয়ার জন্য প্রথমত একটি কোয়ালিফাইড ল’ডিগ্রী (কিউএলডি) থাকতে হবে অর্থাৎ কোন ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় বা তাদের অধিভুক্ত অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে এলএলবি অনার্স সম্পন্ন করতে হবে। এরপর বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স (বিপিটিসি) এর জন্য সেখানকার বার কাউন্সিল অর্থাৎ বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড (বিএসবি) এ আবেদন করতে হবে। আবেদন গৃহীত হলে, ইংল্যান্ডের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স করায়, তাদের যে কোনো একটিতে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স শেষ করার পর ইংল্যান্ডের চারটি ইন’স বার অ্যাট ল-এর সনদ প্রদান করে। অর্থাৎ লিঙ্কনস ইন, গ্রেইস ইন, ইনার টেম্পল ও মিডল টেম্পল এই চারটি ইন’সের মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নিতে হবে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : ব্যারিস্টারদের বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ নিতে হয় কি-না?
ব্যারিস্টার নেওয়াজ : অবশ্যই নিতে হয়। ব্যারিস্টাররা যুক্তরাজ্যের প্র্যাক্তিশনার্স হতে পারে হয়তো কিন্তু বাংলাদেশে প্র্যাকটিসের জন্য বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সনদ বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে বার কাউন্সিলের গতানুগতিক সনদ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। সনদপ্রাপ্তির পর নিম্ন আদালত থেকে প্র্যাকটিস শুরু করতে হয়।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : বাংলাদেশ থেকে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য সেন্টার ফর ব্রিটিশ এডুকেশন (সিবিই) নামে আপনার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, এ প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রী অর্জনের পদ্ধতি কি?
ব্যারিস্টার নেওয়াজ : প্রথমেই বলে রাখা ভালো বাংলাদেশ থেকে ব্যারিস্টারি পড়ার পদ্ধতি গতানুগতিক একাডেমীক পদ্ধতি নয়। আগেই বলেছি, বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স (বিপিটিসি) হচ্ছে একাডেমীক। অন্যদিকে বার ট্রান্সফার টেস্ট (বিটিটি) সম্পূর্ণ প্রফেশনাল কোর্স। আরেকটু সহজ করে বললে, কমনওয়েলথভুক্ত দেশেগুলোর মধ্যে কোনো একটি দেশে যদি কেউ অ্যাডভোকেট হয়ে থাকেন তবে তিনি বার ট্রান্সফার টেস্ট (বিটিটি) এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। কমনওয়েলথভুক্ত দেশেগুলোর বাহিরে যুক্তরাজ্যের সলিসিটর, আইনের শিক্ষক ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আইনজীবীরা বার ট্রান্সফার টেস্ট (বিটিটি) পরীক্ষা দিতে পারেন। বিটিটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আবেদন গৃহীত হলে কেবলমাত্র লন্ডনের বিপিপি ইউনিভার্সিটি সেখানকার বার কাউন্সিল অর্থাৎ বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড (বিএসবি) এর তত্ত্বাবধায়নে এই পরীক্ষা নিয়ে থাকে। সেন্টার ফর ব্রিটিশ এডুকেশন (সিবিই) শুধুমাত্র বাংলাদেশি অ্যাডভোকেটদের ব্যারিস্টারি পড়ার নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : এক্ষেত্রে সিবিই কীভাবে সহযোগিতা করছে?
ব্যারিস্টার নেওয়াজ : বার ট্রান্সফার টেস্ট (বিটিটি) এ মূলত চারটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়ে থাকে। সিভিল লিটিগেশন (civil litigation), ক্রিমিনাল লিটিগেশন (criminal litigation), প্রফেশনাল এথিকস (professional ethics) এবং অ্যাডভোকেসী। এই চার বিষয়ে পরীক্ষা হয় ছয়টি। এরমধ্যে শুধুমাত্র অ্যাডভোকেসী বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হয় তিনটি বাকিগুলো অন্য তিন বিষয়ের ওপর। সেন্টার ফর ব্রিটিশ এডুকেশন (সিবিই) এই সিলেবাস অনুযায়ীপরিক্ষার্থীদের একবছর শিক্ষাপ্রদান করে থাকে। পাশাপাশি পাঠ পদ্ধতি সম্পর্কেও নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : ভর্তি পদ্ধতি ও খরচ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন…
ব্যারিস্টার নেওয়াজ : প্রথমেই বার ট্রান্সফার টেস্ট (বিটিটি) পরীক্ষার জন্য সেখানকার বার কাউন্সিল অর্থাৎ বার স্ট্যান্ডার্ড বোর্ড (বিএসবি) বরাবর আবেদন করতে হবে। আবেদন ফি বাবদ ৪৪০ পাউন্ড পরিশোধ করতে হবে। আবেদন গৃহীত হলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে। ইংল্যান্ডে সাধারণত আগস্ট-সেপ্টেম্বরে বার অ্যাট ল’ কোর্সে ভর্তি করা হয়। ভর্তির ক্ষেত্রে অবশ্য নির্দিষ্ট কোনো বয়সসীমা নেই। এছাড়া সেন্টার ফর ব্রিটিশ এডুকেশন (সিবিই) শিক্ষার্থীদের এক বছরের জন্য যে শিক্ষাসেবা দিয়ে থাকে তার ফি ৩ লাখ টাকা।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রচলিত এলএলবি না করে ব্যারিস্টারি পড়ার বিশেষ কোন সুবিধা কি আছে?
ব্যারিস্টার নেওয়াজ : ব্যারিস্টারি পড়লে ইংরেজিতে দক্ষতা বৃদ্ধিসহ সাবমিশন এবং মামলা থেকে ফ্যাক্ট ও ইস্যু ইস্কুইটিনিং স্কিল ডেভেলপ করবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষাটা হয় মূলত গতানুগতিক ধারা (সেকশন) গলাধঃকরণ পদ্ধতি অবলম্বনে। ফলে কোর্ট প্র্যাকটিস সংক্রান্ত প্রায়োগিক জ্ঞানটার ঘাটতি খানিকটা থেকেই যায়। অন্যদিকে বার প্রফেশনাল ট্রেনিং কোর্স (বিপিটিসি) এ স্কিল ও নলেজ ভিত্তিক পরীক্ষা হয় মোট ১২টি এবং বার ট্রান্সফার টেস্ট (বিটিটি) এ ছয়টি পরীক্ষার তিনটিই হয় অ্যাডভোকেসি বিষয়ে। এরমধ্যে রয়েছে অ্যাপ্লিকেশন, চীফ ও ক্রস। ফলে স্বাভাবিকভাবেই অ্যাডভোকেসি স্কিল ডেভেলপ করবে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আপনি কেবল আইনজীবীই নন, একজন আইনের শিক্ষকও বটে, আইন শিক্ষার্থীদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
ব্যারিস্টার নেওয়াজ : আইন বিষয়টা অনেক গভীর। আইনে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান অর্জনই শেষ কথা নয়। গবেষণা ভিত্তিক পড়াশোনা করা প্রয়োজন। শুধুমাত্র দেশের আইন জানলেই হবে না। পড়াশোনাটা এমনভাবে করতে হবে যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কমপিট করা যায়। পাশপাশি ইংরেজিতে দক্ষতাও অত্যাবশ্যক। সবশেষে একটা কথা বলতে চাই, আইন বিষয়ে পড়াশোনায় কোনো শর্টকাট নেই। প্রচুর পড়াশোনা করার মানসিকতা নিয়েই আইন বিষয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আপনার মূল্যবান সময় থেকে কিছু সময় ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ব্যারিস্টার নেওয়াজ : ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম ও এর অগনিত পাঠকদের প্রতি রইল প্রীতি ও শুভেচ্ছা।