হাওড়া আদালতের ঘটনায় প্রশাসন এবং বিচার বিভাগের রিপোর্ট জমা পড়ার পর শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়েরেরও প্রস্তুতি শুরু করল হাইকোর্ট। আগামী সোমবার প্রধান বিচারপতির এজলাসে ওই ঘটনায় সম্পর্কিত সব পক্ষকে হাজির থাকতে নির্দেশ জারি হয়েছে। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পরেই মামলা গ্রহণযোগ্য কিনা তা বিবেচনা করবে হাইকোর্ট।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) আইনজীবীদের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়েরের আবেদনে ৭ দিন সময় চেয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই স্বতঃপ্রণোদিত মামলা শুরুর প্রক্রিয়ায় জল্পনা বেড়েছে আইনজীবী মহলে।
হাইকোর্ট সূত্রে খবর, প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় রিপোর্টে অনুমতি ছাড়া হাওড়া আদালত চত্বরে ঢুকে পুলিশের টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো বা লাঠি চার্জ উচিত হয়নি বলেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। পার্কিং-জটে পুরসভাও কাঠগড়ায় উঠতে পারে। তবে বুধবার বিকেলে গোলমাল ফের ছড়িয়ে পড়ার পিছনে আইনজীবীদের একাংশের মারমুখী হয়ে ওঠার অভিযোগ বিড়ম্বনা বাড়াতে পারে আন্দোলনকারীদের। হাওড়ার ঘটনার জেরে রাজ্য বার কাউন্সিলের ডাকা কর্মবিরতির জেরে গতকাল শুক্রবারও কোনও আদালতে কাজ হয়নি। কোথাও কোথাও আইনজীবীরা বিক্ষোভ মিছিলও করেন।
প্রায় থেমে যাওয়া গোলমাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে ফের মাথাচাড়া দেয় হাওড়া পুরকর্মীরা অফিস ছাড়ার সময়ে আইনজীবীরা তাঁদের আটকানোয়। প্রথমে পুরসভার গেটে গিয়ে মারমুখী হয়ে ওঠেন আইনজীবীদের একাংশ। তখন পুলিশ সেখান থেকে তাঁদের সরাতে গেলে এক কনস্টেবল ও এক পুরকর্মীকে মারতে মারতে কয়েকজন আইনজীবী তুলে নিয়ে যান আদালতের মধ্যে। ওই দু’জনকে উদ্ধার করতেই পুলিশকে আদালত চত্বরে ঢুকতে হয়েছিল বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি।
পরে আইনজীবীরা পুলিশকে লক্ষ করে নির্বিচারে ইট-বৃষ্টি শুরু করলে বেশ কয়েক জন পুলিশকর্মী জখম হন। প্রায় একই সময়ে জেলা জজের ডাকে তাঁর চেম্বারে ঢোকা পুলিশ কমিশনার বিশাল গর্গকে কয়েকজন আইনজীবীর হাতে চরম হেনস্থার শিকার হতে হয় বলেও অভিযোগ। রাজ্য সরকারের তরফে হাওড়ার ঘটনায় এমনই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে হাইকোর্টে। হাওড়া থেকে বিচার বিভাগের তরফেও পৃথক রিপোর্ট জমা পড়েছে হাইকোর্টে।
বিচার বিভাগের এক অফিসারের মন্তব্য, ‘গোটা ঘটনায় আইনজীবীদের মারমুখী হয়ে ওঠা, পুলিশকে আক্রমণ, হেনস্থার অভিযোগ খুব একটা স্বস্তি দেবে না আন্দোলনকারীদের।’
যদিও অনুমতি ছাড়া আদালতে পুলিশের ঢোকা যে বেআইনি, তা পরোক্ষে মানছেন পুলিশকর্তারা।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকালে পার্কিংয়ে গাড়ি রাখা নিয়ে পুরকর্মীদের সঙ্গে বচসা বাধে এক আইনজীবীর। তা নিয়ে দফায় দফায় দু’পক্ষের মধ্যে মারমারি হলেও দুপুরে সব মিটে যায় বলে দাবি পুলিশের। তার পরেও সেখানে পুলিশ ছিল যাতে নতুন করে গোলমাল না বাধে। কিন্তু বিকেলের দিকে পুরকর্মীদের অফিস ছাড়ার সময়ে আইনজীবীদের একাংশ চড়াও হওয়াতেই পরিস্থিতি জটিল হয় বলে প্রশাসনিক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই দিন বিকেলের পর থেকে হাওড়া পুলিশ সম্পর্কে অভিযোগ তুলে সারা রাজ্যে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধে কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন আইনজীবীরা।
কিন্তু রাজ্য সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী, বুধবার বিকেলের আগে আইনজীবীদের তরফে পুরকর্মীদের বিরুদ্ধে দু’টি অভিযোগ দায়ের করা হলেও পুলিশের বিরুদ্ধে কিন্তু কোনও অভিযোগ ছিল না। ওই দিনের ঘটনায় এক ডিসি, দুই এসিপি-সহ মোট ন’জন পুলিশকর্মী, তিন আইনজীবী ও পাঁচ পুরকর্মী জখম হন বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
জেলা জজের অফিসে আইনজীবীদের একাংশের বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশ কমিশনারকে হেনস্থার অভিযোগ অবশ্য সরকারি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়নি। গোলমাল থামাতে হাজির পুলিশ অফিসারদের প্রতি একদল আইনজীবীর শাঁখা-পলা পরার ‘পরামর্শ’ নিয়ে অবশ্য ক্ষোভে ফুঁসছেন নিচুতলার পুলিশকর্মীরা। বৃহস্পতিবার বার কাউন্সিলের বৈঠকে সুনির্দিষ্ট ভাবে পাঁচ পুলিশ অফিসার এবং চার পুরকর্মীর নামে অভিযোগ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পরে চূড়ান্ত চিঠিতে সেই সব নাম বাদ দেওয়ায় বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকেও কড়া চিঠি দিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন কাউন্সিলের অন্যতম সদস্য ও হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি উত্তম মজুমদার।