ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পিকেএম এনামুল করিমের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতির সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া ফেনীর পুলিশের এডিশনাল এসপি রবিউল ইসলাম, এসআই ইকবালকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে।
নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় পুলিশের দায়দায়িত্ব খতিয়ে দেখতে পুলিশ সদর দফতর গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করেছে পুলিশ সদর দপ্তরের তদন্ত কমিটি।
গত ৩০ এপ্রিল রাতে কমিটি ওই প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনের অনুলিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর কথা রয়েছে।
যাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে, তাঁরা হলেন পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, সোনাগাজী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন, উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ইকবাল ও মো. ইউসুফ।
নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া ও অপরাধীদের রক্ষার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছিল ফেনীর পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এই প্রেক্ষিতে গত ১৩ এপ্রিল পুলিশ সদর দপ্তর পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক রুহুল আমিন।
নুসরাত শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে থানায় গেলে ওসি তাঁর ভিডিও ধারণ করেন। ওসির বিরুদ্ধে এই ঘটনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় তার বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলা পিবিআইয়ে হস্তান্তরের পর এখন পর্যন্ত মামলার এজহারভুক্ত আট আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।