সুপ্রিম কোর্ট নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন। অনেক আশা। আগামী দিনগুলোতে এ স্বপ্ন আর আশা বাস্তবায়নে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন তিনি। বলেন, সহকর্মীরা আমার ওপর আস্থা রেখেছে। আমি তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে চাই কাজ দিয়ে। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র এডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন এভাবে গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন তার কথা। এর আগে তিনি দু’বার সম্পাদক ছিলেন।
আমিন উদ্দিন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল হওয়ার এর সবকিছু আমার জানা। আইনজীবীদের সমস্যা, তাদের দুঃখ, কষ্ট আমি প্রতিনিয়ত দেখি। আমিও এ কষ্টের ভাগিদার। আমার প্রথম কাজ হবে আইনজীবীদের সমস্যা সমাধানে কাজ করা। আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে সকল সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাবো।
এম আমিন উদ্দিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টে বর্তমানে বিপুল সংখ্যক আইনজীবী রয়েছেন। তাদের প্রধান সমস্যা বসার জায়গা। এ সমস্যা সমাধানে সরকারের সহায়তায় একটি নতুন ভবন নির্মানের জন্য জোর চেষ্টা চালাবেন বলে জানান তিনি।
আমিন উদ্দিন বলেন, যেসব আইনজীবীর প্র্যাক্টিসের বয়স ১০ বছর অতিবাহিত হয়েছে- তারা যেন সরাসরি মামলা করতে পারেন এ সুযোগ সৃষ্টির জন্য কাজ করবো। বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট পরিক্ষা যাতে বছরে দু’বার হয়, এজন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দিবেন বলে জানান।
এম আমিন উদ্দিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের কর্মপরিবেশ আরো উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাবো। এছাড়া আইনজীবী সমিতিকে যুগোপযোগী করে তোলার কাজে হাত দেবো।
তিনি বলেন, বারে ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া, বিভিন্ন যুগান্তকারী মামলার রায়, বিভিন্ন জার্নাল, আইন বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মতামত একটি অনলাইন প্লার্টফর্মে নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।
মৌলভীবাজারের কুলাউরার সন্তান এডভোকেট আমিন উদ্দিন বলেন, আমি অত্যন্ত সাধারণ একজন মানুষ। সাধারণ পরিবার থেকে উঠে এসেছি। তবে অনেকেই বলেন আমি সবকিছু সময়মত করি। আসলে আমি যাকে গুরু মনে করতাম তিনি হচ্ছেন মাহমুদুল ইসলাম স্যার । আমি তার সঙ্গে এসিস্টেন্ট এটর্নি জেনারেল হিসেবে কাজ করেছি। পরবর্তীতে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হয়েছি। ভাগ্যক্রমে তখন আমিই সর্ব কনিষ্ঠ ডেপুটি এটর্নি জেনারেল ছিলাম। স্যার সবসময় বলতেন, কোর্ট বসার আগে কোর্টে উপস্থিত থাকতে হবে। মামলার বিষয়বস্তু আগেই দেখে নিতে হবে। মামলার নথি বাসায় পড়ার চেয়ে কোর্টে বসে পড়লে বেশি ক্লিয়ার হওয়া যায়। আমি এখনো সেটাই বিশ্বাস করি। কোনো একটি মামলার চুম্বক অংশ নথিতে লিখে রাখি।
তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সম্পূর্ণ স্বধীনভাবে কাজ করছে। বিচারক নিয়োগের কোনো আইন না থাকা প্রসঙ্গে বলেন, আমি মনে করি বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে সংবিধানের আলোকে একটি রুলস ফ্রেম করা উচিত। কিন্তু কোনো রুলস নেই। এজন্য যেখানে যখন আমার সুযোগ হবে এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিদায় নিয়ে তিনি বলেন, বিচারকরা যখন উনার সাথে বসবেন না, উনার সহকর্মীরা যখন ঠিক করেন, তখন আমাদের কি করার আছে? তাছাড়া একজন সহবিচারক যদি তার প্রতি কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলে। তখন উনিই ভালো বলতে পারবেন, কেন তার সহবিচারকরা তার সাথে বসতে চাইলো না। হয়তো তিনি বিদায় নেয়ার এমন একটি সুযোগই খুঁজছিলেন। তবে এটা একটা র্দুভাগ্যজনক ঘটনা। এর দায় উনাকেই নিতে হবে।
মামলা জট প্রসঙ্গে বলেন, শুধু আমাদের দেশে নয়। পৃথিবীর সব দেশেই মামলা জট রয়েছে। এই জট থেকে মুক্তি পেতে হলে কোর্টের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে বিচারকের সংখ্যাও।
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের কথা উল্লেখ করে আমিন উদ্দিন বলেন, আমি যখন আইন পেশায় নিয়োজিত হই তখন সিনিয়রগণ জুনিয়রদের অনেক সাহায্য করতেন। এখন কাজের ভিড়ে ততটা সাহায্য করা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আমি যেহেতু অনেক সাহায্য পেয়েছি তাই আমি আমার জুনিয়রদের অনেক সাহায্য করার চেষ্টা করি।
এম আমিন উদ্দিন বলেন, জুনিয়রদের মামলা করতে অনেক সময় ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তারা অনেক সময় মামলা করতে পারে না। আমরা সিনিয়ররা গেলে আমাদের মামলা আগে হয়। কিন্তু অনেক সময় তারা আর সেদিন মামলাটি করতে পারে না। আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সপ্তাহের নির্দিষ্ট একটা দিন নবীন আইনজীবীদের মামলা করার ব্যবস্থা করা যায় কিনা সেই বিষয়ে আলাপ করব। এছাড়া আলাপ করব যারা আইন পেশায় দশ বছরের কম, একটা নির্দিষ্ট দিনে যাতে তাদের ওই মামলার শুনানি হবে। তাহলেই দেখা যাবে জুনিয়ররা অনেক উপকৃত হবেন। সূত্র : মানবজমিন