হেরোইন ব্যবসায়ীর জামিনের নথি জালিয়াতির অভিযোগে রাজশাহী বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য অ্যাড. মো. সালাহউদ্দিন আহম্মেদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাজধানীর শাহবাগ থানা পুলিশের একটি দল রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানা পুলিশের সহায়তায় বৃহস্পতিবার (২ মে) সকালে উপজেলার গড়েরমাঠ এলাকার বাড়ি থেকে তাকে আটক করে।
গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি শাহবাগ থানা সূত্রের বরাত দিয়ে জানান, ২০১৬ সালের অক্টোবরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পৌর এলাকার আঁচুয়াভাটা গ্রামের আফজাল হোসেন বিশ্বাসের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাবুকে ৫৫০ গ্রাম হেরোইনসহ তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে গোদাগাড়ী থানা পুলিশ। পরে গোদাগাড়ী থানায় মাদকদব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ঐ বছরের নভেম্বরে পুলিশ বাবুর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।
রাজশাহী জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কয়েক দফা জামিনের আবেদন করেও নামঞ্জুর হওয়ায় বাবু তার আইনজীবীর মাধ্যমে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন। সেখানে তিনি জামিন পান। হাইকোর্টের জামিনের আদেশনামাসহ রাজশাহীর বিচারিক আদালতে আসামির পক্ষে জামিননামা দাখিল করেন অ্যাড. সালাহউদ্দিন আহমেদ।
ওসি আরও জানান, নিয়মানুযায়ী হাইকোর্টের জামিনের কাগজপত্র রাজশাহীর বিচারিক আদালতে পাঠানোর পর নথিপত্র যাচাইয়ের সময় ধরা পড়ে যে, ৫৫০ গ্রাম হেরোইনের মূল মামলাটির জামিনের জন্য হাইকোর্টে দাখিলকৃত অনুলিপি ও কাগজপত্রে মাত্র ৪৮ গ্রাম হেরোইন দেখানো হয়েছে। মামলা উপস্থাপনকারী আইনজীবী ও তার সহযোগী আইনজীবীদের মাধ্যমে নিম্ন আদালতে থাকা মামলার মূল অনুলিপি জাল করে নকল কাগজপত্র হাইকোর্টে দাখিল করেন বলে ধরা পড়ে।
পরে বিষয়টি রাজশাহীর বিচারিক আদালত হাইকোর্টকে অবহিত করেন। হাইকোর্টের বেঞ্চ মামলার নথি জালিয়াতির অভিযোগের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে আসামি আশরাফুল ইসলাম বাবুকে দেওয়া জামিন বাতিল করেন এবং এই নথি জালিয়াতির ঘটনাটি তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
সিআইডি মামলাটি তদন্ত করে সম্প্রতি জামিন জালিয়াতির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারের দফতরে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচিত মামলাটির মূল নথির অনুলিপি জালের সঙ্গে রাজশাহী বারের আইনজীবী সালাহউদ্দিন আহমেদ ও তার সহযোগীরা সরাসরি জড়িত। চলতি বছরের মার্চে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রারের দফতরের তত্ত্বাবধায়ক মজিবুর রহমান বাদী হয়ে অ্যাড. সালাহউদ্দিন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একটি জালিয়াতির মামলা করেন।
জানতে চাইলে রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহীদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা তদন্ত করেছি। সেখানে উঠে এসেছে- রাজশাহীর মাদক ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে ছয়জন আইনজীবী কাজ করছেন। তাদেরকে শনাক্ত করার পর তাদের উপর নজরদারি করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃত সালাহউদ্দিন তাদের একজন।’
বার্তা২৪.কম