ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগকারী নারী নিজের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন কর্মী ওই নারী বলেন, নিজের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন কারণ তাঁর মনে হয় তিনি সুবিচার পাবেন না। একটি চিঠিতে তিনি জানান কমিটি কাজকর্মে তিনি ভীত এবং ঘাবড়ে গিয়েছেন। আইনজীবীকে তাঁর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এমতাবস্থায় সুবিচারের সুযোগ নেই বলে তিনি মনে করেন।
এক বিবৃতিতে অভিযোগ আনা ওই নারী তদন্ত কমিটি থেকে সরে আসার বিষয়ে চারটি কারণ জানিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘আজ ৩০ এপ্রিল। এ নিয়ে তৃতীয় দিন আমি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের (মাননীয় বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি ইন্দু মলহোত্র) অভ্যন্তরীণ কমিটির সামনে হাজিরা দিলাম। পূর্ণ আস্থা নিয়েই আমি গত ২৬ ও ২৯ এপ্রিল তদন্ত কমিটির সামনে গিয়েছিলাম। আশা করেছিলাম, কমিটি নিরপেক্ষ ও সংবেদনশীল পথে হাঁটবে।’
‘কিন্তু এখন পরিস্থিতিটা এমন যে, আমার শ্রবণশক্তির সমস্যা, উদ্বেগ ও ভয়ের কথা জানানো হলেও শুনানির সময়ে আমার সঙ্গে কোনো আইনজীবী বা বন্ধুকে রাখতে দেয়া হচ্ছে না, শুনানির অডিও বা ভিডিও রেকর্ডিং করা হচ্ছে না, ২৬ ও ২৯ এপ্রিল আমার বক্তব্য নথিভুক্ত করা হলেও তার কপি আমাকে দেয়া হয়নি, তদন্ত প্রক্রিয়া কোন পথে চলবে, আমাকে তা জানানো হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আমার মনে হয়, আমি এই কমিটির কাছ থেকে সুবিচার পাব না। তাই আমি এই তদন্ত প্রক্রিয়ায় আর অংশ নেব না।’
তিনি আরও বলেন, তিন বিচারপতি তাকে জানান, এই তদন্ত ঘরোয়াভাবে চালানো হচ্ছে। তার বক্তব্য, ‘২৬ এপ্রিল কমিটির বিচারপতিরা বলেছিলেন, এটা অভ্যন্তরীণ কমিটির তদন্ত নয়, আবার নির্দেশিকা মেনে তদন্ত চালানো হচ্ছে না। এই তদন্ত একটা ঘরোয়া প্রক্রিয়া মাত্র।’
গত ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ২২ জন বিচারপতিকে হলফনামা দিয়ে ওই নারী অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালে প্রধান বিচারপতি গগৈ তাকে যৌন হেনস্থা করেছিলেন। তখন তিনি জুনিয়র কোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন।
হলফনামায় তিনি জানান, গগৈ ‘আমার কোমর জড়িয়ে ধরেন, আমার সর্বাঙ্গে হাত বুলান’ এবং শরীর দিয়ে ওই নারীর দেহ চেপে ধরেন। ওই নারী তখন দু‘হাত দিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন। এরপর তাকে তিনবার বদলি করা হয় এবং গত ডিসেম্বরে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়। ওই নারীর স্বামী এবং ভাইকেও তাদের চাকরিতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান বিচারপতি জানান, এ ঘটনার পেছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ রয়েছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন বলেও মন্তব্য করেন গগৈ। বিষয়টি নিয়ে শুনানির জন্য বিশেষ বেঞ্চ গঠন করা হয়। গত সপ্তাহে গগৈ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বাকি বিচারপতিদের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত হয়, তিন বিচারপতির একটি প্যানেল এ নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত চালাবে।
এদিকে সর্বোচ্চ আদালতের প্রাক্তন কর্মী যখন অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন ততক্ষণে কমিটি তিনটি শুনানি করে ফেলেছে। তবে এই কমিটি গঠন নিয়েও কিছু বিতর্ক হয়েছিল। প্রথমে এখানে বিচারপতি এন ভি রামানার নাম ছিল। ওই নারী দাবি করেন বিচারপতির রামানার সঙ্গে প্রধান বিচারপতির পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। এই অভিযোগ ওঠার পর বিচারপতি রামানা নিজেকে কমিটি থেকে সরিয়ে নেন। তিনি বলেন বিষয়টি এমন যাতে শুধু সুবিচার হলেই হবে না, সুবিচার যে হল তা প্রকাশিত হওয়া জরুরি। আর তাই এখন এই প্যানেলে রয়েছেন বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ইন্দু মালহোত্রা।
আগেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর মনে হয়েছে এমন অভিযোগ আসলে বিচার ব্যবস্থাকেই সঙ্কটে ফেলে দেয়। জরুরি ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলা শোনে। তাতে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ অবিশ্বাস্য। এটি অস্বীকার করতেও যে স্তরে নামতে হবে সেখানে নামা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তবে ওই শুনানি নিয়ে প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্টের দুটি আইনজীবী সংগঠন। তারা দাবি করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিক সুপ্রিম কোর্টের ‘ফুল কোর্ট’।
সেই মতো প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে বাকিরা প্যানেল তৈরির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আজ (২ মে) এই কমিটির সামনে হাজিরা দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।