এবার কারাগারে বন্দী অবস্থায় এক আসামীকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। অ্যাডভোকেট পলাশ কুমার রায়কে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন তার পরিবারের।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৃত্যু আগে এভাবে অ্যাডভোকেট পলাশ কুমার তার হত্যার বর্ণণা দিয়েছেন। এমন দাবি করেছেন তার পরিবার। পলাশ কুমারের মা মীরা রানী রায়ের অভিযোগ ,সু-পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে তার ছেলেকে।
ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি দাবি করেছেন নিহতের স্বজনেরা। ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে কারাগারে পাঠানো পঞ্চগড় জেলা কারাগারে টয়লেটে অগ্নিদগ্ধ পলাশ কুমার রায় মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান।
গত ২৫ মার্চ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছিলো। ২৬ এপ্রিল কারাগারের অভ্যন্তরে পলাশ কুমার রায়কে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে প্রথমে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল এবং পরে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত ২৫ মার্চ দুপুরে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে তার বিরুদ্ধে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের করা মামলা প্রত্যাহার দাবিতে পরিবারের লোকজন নিয়ে অনশন শুরু করেন পলাশ কুমার রায়। পরে সেখান থেকে উঠে তারা জেলা শহরের শের-ই-বাংলা পার্ক সংলগ্ন মহাসড়কে এসে মানববন্ধন শুরু করেন। একপর্যায়ে রাস্তা বন্ধ করে হ্যান্ডমাইকের সাহায্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কটূক্তি করেন পলাশ। এমনকি প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী সম্পর্কেও অশালীন বক্তব্য দেন। ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা তাকে সদর থানা পুলিশের কাছে তুলে দেন। ওইদিন বিকেলে প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগে স্থানীয় রাজিব রানা নামের এক যুবক তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। ওই দিনই তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
জেলা কারাগার ও নিহতের পারিবারিক সূত্র জানায়, ২৮ এপ্রিল অন্য একটি মামলায় ঢাকার একটি আদালতে তাকে হাজির করার তারিখ ছিল। ২৬ এপ্রিল বিকেলে তাকে ঢাকা পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সকালে হঠাৎ হাসপাতালের বাইরে থাকা একটি টয়লেট থেকে সে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় দৌড়ে বের হয়। এ সময় কারারক্ষীরা তাকে উদ্ধার করে এবং শরীরের আগুন নেভান। আগুনে তার শরীরের ৪৭ শতাংশ পুড়ে যায়। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পলাশের মা মীরা রাণী রায় বলেন, পলাশ এক সময় কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির আইন কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করতো। চাকরির এক পর্যায়ে কোম্পানির সাথে তার দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। তার বিরুদ্ধে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানি ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলা করেন। মামলার পর থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে পলাশ। তার অগিদগ্ধ হওয়ার ঘটনায় অবশ্যই কারা কর্তৃপক্ষ দায়ী। আশা করি এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত শেষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পঞ্চগড় কারাগারের জেলার মোশফিকুর রহমান বলেন, পলাশ কারাগারে ভালোই ছিলেন। প্রথমে তিনি নিজেকে সিরোসিস রোগী পরিচয় দিয়ে সাধারণ বন্দিদের সঙ্গে থাকতে আপত্তি জানান। পরে সহানুভূতি দেখিয়ে তাকে কারাগারের অভ্যন্তরে হাসপাতালে রাখা হয়। হাজতি হিসেবে একটু কম কথা বলতেন তিনি। নববর্ষের অনুষ্ঠানে চমৎকার কবিতাও পাঠ করেন। তবে ঢাকার একটি মামলা নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন পলাশ। ২৮ এপ্রিল সেই মামলায় ঢাকার এক আদালতে তাকে হাজির করার তারিখ ছিল। ২৬ এপ্রিল বিকেলে তাকে ঢাকা পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু সকালে তাকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।