আইমান রহমান খান:
গরমকালে রমজান মাস আইনজীবীদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে ঢাকার জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করা এমন অনেক আইনজীবীরা আছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগ রাজধানীর উল্টো প্রান্ত থেকে আদালতপাড়ায় হাজির হন। গরম ও ট্রাফিক জ্যামে তাদের কার্যদিবসের অর্ধেকটাই কেটে যায়। এবছর রমজান মাস মে মাসে পড়েছে। তারমানে সাধারণ তাপমাত্রা ৩৮° থেকে ৪২° ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনিতেই ভরদুপুরের প্রচন্ড দাবদাহ, তার উপর যখন সিয়াম সাধনায় একজন ধর্মপ্রাণ আইনজীবী রোজা পালন করেন, বিশ্রামাগারহীন কোর্ট প্রাঙ্গণ তার জন্য হয়ে উঠে অসহনীয়। রমজান মাস বলে কোর্টও বন্ধ হবেনা, থামবেনা ব্যস্ততায় জর্জরিত আইনজীবীদের দৈনন্দিনের আইনপেশা। তাই দরকার দুটির মধ্যে ব্যালেন্স, যাতে রোজা ও রাখা যাবে এবং প্র্যাকটিসও অব্যাহত থাকবে। রোজা রেখে কিভাবে সাচ্ছন্দ্যে প্র্যাকটিস চালানো যায় এমন পাঁচটি টিপস্ নিম্নে দেয়া হলো।
১। সারাদিন কি কি কাজ করবেন তা আগের দিন প্ল্যান করে নিন: রোজা রেখে কাজ করাটা কষ্টকর কারন খালি পেটে মনযোগ টিকিয়ে রাখা কঠিন। তাই যেসব কাজগুলি করতে প্রচুর এনার্জি দরকার সেগুলো সকাল সকাল সেড়ে নিন, যাতে কম গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দিনশেষে হালকা এনার্জিতেই সম্পন্ন করা যায়। যেমন মামলা ফাইলিং, মামলার তারিখ আনা, হাজিরা জমা দেয়া ইত্যাদি, সকালে সেরে ফেলুন। মক্কেলকে দুপুরের পর আসতে বলুন।
২। একটানা কাজ না করে ছোট ছোট ব্রেক নিন: সকালের কাজের চাপ সামলিয়ে কোন একটি খালি কোর্টরুমে গিয়ে একটু বসুন। কোট খুলে, টাই ঢিলা করে ১০ মিনিট বিশ্রাম নিন। দেখবেন পরের কাজগুলো অনেকটাই আরামে সারতে পারবেন।
৩। মাঝপথে এনার্জি ফিরে পেতে যা করনীয় তা করুন: দুপুরবেলা একজন রোজাদার ব্যক্তি অনেক কঠিন সময় পাড় করেন। তাই নামাজের পর একটা ছোট্ট ঘুম এনার্জি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। চেম্বারের ডেস্কে মাথা নিচু করে আধঘন্টা ঘুম খুবই কার্যকর। যদি তা করার সুযোগ না থাকে, তাহলে ওয়াশরুমে চোখেমুখে পানির ঝাপটা দিলে একই ফল পাওয়া যাবে।
৪। ছাতা,সান গ্লাস ও ওয়েট-টিসু সাথে রাখুন: কোর্ট এলাকার খোলা যায়গায় চলাচল করার সময় মাথার উপর অবশ্যই ছাতা ধরে রাখবেন। এতে আপনার মাথা রোদের তাপ থেকে বিরত থাকবে৷ সেই সাথে সানগ্লাস বা রোদচশমা ব্যবহার করুন যাতে রোদ ও ধুলাবালি থেকে চোখকে রক্ষা করতে পারেন। বাজারে আজকাল ছোট প্যাকেটে ওয়েট টিসু পাওয়া যায়, যা দারুণ কার্যকরী। একটি ওয়েট টিসু দিয়ে সমস্ত মুখমন্ডল মুছলেই নিশ্চিত সুস্তি ফিরে আসবে।
৫। কোর্ট অফিসারদের সামনে মাথা ঠান্ডা রাখুন: আদালতের স্বাভাবিক কার্যতালিকার ব্যাঘাত ঘটলে প্রায়শই আইনজীবীরা কোর্ট অফিসারদের উপর চোটে যান। যদিও মাঝেমধ্যে দোষ দুপক্ষেরই থাকে। তাই দেখা যায় অনেক আইনজীবীরাই প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সাথে বাজে আচরণ করে বসেন। আর রোজা রেখে সেই রাগটা বহুমাত্রিক হয়। দেখা যায় বিজ্ঞ আইনজীবীকে এক দিনের রাগের মাশুল সারা বছর দিতে হয়। তাই রোজার পবিত্রতা রক্ষার্থে ও কর্মক্ষেত্রে সম্পর্ক অটুট রাখার লক্ষ্যে মাথা ঠান্ডা রেখে কথা বলুন।
লেখক : অ্যাডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট