বাংলাদেশের অসংখ্য মানুষ ভাগ্য পরিবর্তন কিংবা পেশাগত কারণে অথবা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। এরমধ্যে অনেকেই আবার দীর্ঘস্থায়ীভাবে বসবাস করছেন বিদেশে। বিদেশে থাকায় যখন তখন চাইলেই দেশে আসতে পারেন না। নানা জটিলতার কারণে প্রয়োজনের সময় দেশে আসতে পারছেন না বলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেমে থাকে। যেমন আপনার কিছু সম্পত্তি রয়েছে দেশে কিন্তু আপনি এই জমি বিদেশে বসে দেখাশুনা বা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন না, আবার ধরুন আপনি বেশ কিছু টাকা পান কারো নিকট, আপনি এমতাবস্থায় একটি মামলা দায়ের করতে চান কিন্তু বিদেশে থেকে কি সম্ভব? উত্তর হচ্ছে সম্ভব। দেশে আসতে না পারলেও প্রয়োজনীয় এসব কাজ সম্পাদনের জন্য আইনি প্রক্রিয়ায় পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দলিল সম্পাদন করা যেতে পারে। যে কোন কাজ আপনার অনুপস্থিতিতে সম্পাদনের ক্ষমতা অর্পণ করতে পারেন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি সম্পাদনের মাধ্যমে। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন অ্যাডভোকেট রিনা পারভীন মিমি।
আসুন প্রথমে জেনে নিই পাওয়ার অব এ্যাটর্নি কি?
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি আইন ২০১২ এর ধারা ২ অনুযায়ী পাওয়ার অব এ্যাটর্নি অর্থ এমন কোন দলিল যার মাধ্যমে কোন ব্যক্তি তার পক্ষে উক্ত দলিল বর্ণিত কার্য সম্পাদনের জন্য আইনানুগভাবে অন্য কোন ব্যক্তির নিকট ক্ষমতা অর্পণ করেন। বাংলায় পাওয়ার অব এ্যাটর্নি কে বলা হয় “মোক্তারনামা” এর শব্দের অর্থ “প্রতিনিধি” “মোক্তারনামা” শব্দের অভিধানিক অর্থ হচ্ছে, “মোক্তার নিয়োগপত্র” বা প্রতিনিধি নিয়োগপত্র। মোক্তারনামা দুই প্রকারের যথা (১) আম-মোক্তারনামা, (২) খাস-মোক্তারনামা। আম-মোক্তার নামার মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয় এবং খাস মোক্তারনামার মাধ্যমে বিশেষ ক্ষমতা প্রদান করা হয়।
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি অবশ্যই লিখিত হতে হবে যেহেতু এটি একটি আইনগত দলিল। বিদেশে থাকাবস্থায় কোন ব্যক্তি কাউকে পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দিতে চাইলে প্রথমেই তাকে পাওয়ার অব এ্যাটর্নি সর্ম্পকে জানতে হবে। এই ক্ষেত্রে কোন আইনজীবীর মাধ্যমে যিনি পাওয়ার অব এ্যাটর্নি সর্ম্পকে ভাল জানেন বা এমন কাউকে দিয়ে সঠিকভাবে লিখে দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যায়ন করে পাঠাতে হবে। যে দেশে বাংলাদেশের দূতাবাসের কনসলারের সম্মুখে দাতা স্বাক্ষর করবেন এবং উক্ত কনসলার কর্তৃক তা সত্যায়িত হবার পর পাওয়ার দাতা পাওয়ারটি গ্রহীতা বা আম-মোক্তার বরাবরে পাঠিয়ে দিবেন। উক্ত পাওয়ার অব এ্যাটর্নি পাওয়ার পর বাংলাদেশের ফরেন মিনিষ্ট্রি (পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়) সহকারী সচিব, কনসলার কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে।
পরবর্তীতে তা জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। এরপর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বিদেশে সম্পাদিত আম-মোক্তার নামা দলিলে প্রদত্ত বর্নিত সম্পত্তিতে সরকারী স্বার্থ জড়িত আছে কিনা তার তথ্যসহ সকল দাগের তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রেরণ করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর চিঠি প্রেরণ করবেন এবং আরেকটি চিঠি প্রেরণ করবেন সহকারী সচিব (কনস্যুলার) পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় বরাবর। সকল তথ্যসমগ্র জেলা প্রশাসকের রাজস্ব কার্যালয়ে আসার পর ২,০০০/- টাকার চালান প্রদানের পর নিদিষ্ট একটি সময়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ইহা ৫০০ এর অপর পাতায় ৫০০ টাকার দুটি স্ট্যাম্প লাগাবে। তখন অত্র পাওয়ার অব এ্যাটর্নি দলিল নম্বর এবং এই নম্বর দিয়েই পাওয়ার অব এ্যাটর্নির সঠিকভাবে হয়েছে কিনা যাচাই বাছাই করা থাকে।
এখন কথা হলো ফরেন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি কি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়?
অনেকেই এটা ভেবে থাকেন বা ভূল করেন যে, ফরেন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি রেজিস্ট্রেশন করতে হয় না কারণ এটি অনেকগুলো সরকারি অফিস হতে নানাভাবে যাচাই বাছাই হয়ে আসে। তবে এ ধারনাটা একেবারেই ভুল। ফরেন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি অবশ্যই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট পাওয়ার অব এ্যাটর্নিটি স্ট্যাম্পযুক্ত হওয়ার পর এটি রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ধারা ৮৯ এ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংশ্লিষ্ট সাব রেজিস্ট্রার ১নং বহিতে নথিভূক্ত করে সংরক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
পাওয়ার অব এ্যাটর্নি নিয়ে ভুল ধারণা
অনেকেই মনে করেন পাওয়ার অব এ্যাটর্নি একবার দিয়ে দিলে তা আর বাতিল করা যায় না বা সরল মনে এটা বিশ্বাস করেন এটি বাতিল অযোগ্য বা এটার অবসান ঘটানো সম্ভব নয়। তবে এটি একটি ভুল ধারনা। পাওয়ার দাতা বা পাওয়ার গ্রহীতা চাইলেই এটার অবসান করতে পারবেন। পাওয়ার দাতা এটার অবসান ঘটাতে চাইলে উক্ত পাওয়ার অব এ্যাটর্নির মাধ্যমে পাওয়ার গ্রহীতাকে রেজিস্ট্রার্ড ডাকের মাধ্যমে ৩০ দিনের নোটিশ প্রদানপূর্বক প্রদত্ত ক্ষমতার অবসান ঘটাতে পারবেন। আবার পাওয়ার গ্রহীতাও পাওয়ার দাতাকে ৩০ দিনের নোটিশ প্রদানপূর্বক পাওয়ার অব এ্যাটর্নির দায়িত্ব পরিত্যাগ করতে পারবেন।
লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও সহযোগী সম্পাদক, ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম। ইমেল- rinaparvinmimi18@gmail.com