আইনজীবী হিসেবে বার কাউন্সিলের সনদ নেই, শিক্ষানবিশও নয় এমন ব্যক্তিরাও আইনজীবী সেজে বিভিন্ন মামলা-মোকাদ্দমা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আসেন। এমনকি মামলার শুনানির জন্য কোর্টে যান। এসব ব্যক্তিকে টাউট-দালাল অভিহিত করে, তাদেরকে প্রতিহতের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আইনজীবী সমিতিগুলো। এ পর্যন্ত আদালত অঙ্গন থেকে চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ৮-১০ জনকে। এ অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
বার কাউন্সিল অ্যাক্ট অনুয়ায়ী যাদের আইনজীবী হিসিবে সনদ নেই, কিন্তু কোর্টে মামলা-মোকাদ্দমার শুনানিতে অংশ নেয় তারা টাউট-দালাল বলে অভিহিত হবেন। তাদের জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে।
২০১৯-২০ সেশনের শুরু থেকেই সুপ্রিম কোর্ট বার টাউট-দালাল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। সম্প্রতি তারা এই অভিযান শুরু করে। এর অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। টাউট-দালাল হিসেবে চিহ্নিত করে ৮-১০জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন খোঁজখবর নিয়ে এই টাউট-দালাল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছি। এদের কারণে আদালতের প্রকৃত আইনজীবীদের প্রফেশনে সমস্যা হচ্ছে। তাদের কোনো আইডি কার্ড নেই। আইনজীবী সমিতির প্রত্যেকটি সদস্যকে আমরা আইডি কার্ড দিয়েছি। সিনিয়র, জুনিয়র এমনকি শিক্ষানবীশ আইনজীবীদেরকেও আইডি কার্ড দিয়েছি। ক্লার্কদেরও আইডি কার্ড আছে। কিন্তু দালালদের কোনো আইডি কার্ড নেই। তারা নিয়মিত কোর্টে এসে মামলা মোকাদ্দমারার তদবির করছে। লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে। ল’ ইয়ারদের সঙ্গে প্রতারণা করছে।’
তিনি বলেন,‘আমরা এ পর্যন্ত চারজনকে আটক করে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। ৮-১০ জনকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
কথিত আছে সিনিয়ররা টাউট-দালালদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ কথা সঠিক নয়। ঢালাওভাবে সিনিয়রদের বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ গ্রহণযোগ্য না।’
সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা সনদ ছাড়াই ওকালতি করেন, টাউট-দালালি করেন তাদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকা দরকার। এই সমস্ত টাউট শ্রেণীর লোকেরা আইন অঙ্গন ও বিচার বিভাগকে কলুষিত করছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে টাকা আয় করা। ক্লায়েন্টের প্রতি তাদের মনোযোগ নেই, দরদ নেই। কারণ তারা প্রফেশনাল আইনজীবী না।’
তিনি বলেন, ‘এই শ্রেণীর লোকেরা থার্ট পার্টি হিসেবে কাজ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্রফেশনাল আইনজীবীদের রুটি রুজিতে বাধা সৃষ্টি করছে, ক্ষতি করছে। এদের প্রতিহত না করলে আদালত অঙ্গনের ভাবমূর্তি আরও নষ্ট হবে।’
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. ফারুক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘টাউট-দালালদের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বিষয়টি সিনিয়র আইনজীবীদের মনে রাখতে হবে। কোর্টের বাস্তবতা হলো অনেক সিনিয়র আইনজীবী টাউট-দালাল শ্রেণীর লোকদের কাছ থেকে মামলা গ্রহণ করে তাদেরকে টাকা কামানোর সুযোগ করে দেন। এটি করা থেকে সিনিয়রদের বিরত থাকতে হবে।’
তিনি বলেন,‘ আদালত পাড়ায় টাউট উচ্ছেদ অভিযানে বিচার প্রার্থীদের ভূমিকা আছে। তাদেরকে যাচাই করতে হবে যার কাছে মামলা দিচ্ছি, সে সঠিক আইনজীবী কিনা। একাডেমিক ল’ ইয়ার কিনা। একাডেমিক ল’ ইয়ারদের শরণাপন্ন হতে হবে। আর আইনজীবী সমিতির কাজ হবে টাউট-দালাল উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখা। এতে করে দুইটা পক্ষই উপকৃত হবে। আইনজীবীদের মান বাড়বে।’
এদিকে, গত ৮ মে সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের নিচ তলায় টাউট-দালাল উচ্ছেদ অভিযান কর্মসূচির পক্ষে মানববন্ধন করেন টাউট-দালাল নির্মূল আন্দোলন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও টাউট-দালাল নির্মূল আন্দোলনের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফরহাদ উদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনে অনেকেই আইনজীবী পরিচয় দিয়ে মামলা মোকদ্দমার তদবির করছেন। হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। তাদের অত্যাচারে প্রকৃত আইনজীবীরা মামলা পাচ্ছেন না। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আইনজীবীরা। বদনাম হচ্ছে আইন পেশার।
বক্তারা আলোচনায় অংশ নিয়ে আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বার টাউট-দালাল নির্মূলে কার্যকরী উদ্যোগ নেবে। তা না হলে এ পেশার মান দিন দিন কমে যাবে। অবিলম্বে টাউট-দালালদের উচ্ছেদের আহ্বান জানান মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা।