দুদকের ভুল মামলায় জেল খাটা জাহালমের মামলার বিষয়ে চেম্বারজজ আদালতের আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে জাহালমের মামলা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে চলতে আর বাধা নেই।
জাহালমের মামলা স্থগিতে দুদকের করা আবেদন শুনানি নিয়ে আজ সোমবার (১৩ মে) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ আদেশ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুলাহ আল মাহমুদ বাশার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৩ এপ্রিল জাহালমের মামলার সব কার্যক্রম ১৩ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন আপিল বিভাগের চেম্বারজজ আদালত।
বিনা অপরাধে দুর্নীতির ৩৩ মামলা কাঁধে নিয়ে তিন বছর কারাভোগের পর হাইকোর্টের আদেশে মুক্ত হন টাঙ্গাইলের জাহালম।
দুর্নীতি-সংক্রান্ত মামলা শুনানির ক্ষেত্রে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে গত ২৩ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগে বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান মামলার কার্যক্রম স্থগিত করেছিলেন।
এর আগে গত ১৭ এপ্রিল নিরীহ জাহালমের কারাভোগ নিয়ে দুদকের অভ্যন্তরীণ তদন্ত প্রতিবেদন তলব করেন হাইকোর্ট। ২ মে পরবর্তী শুনানির নতুন তারিখ ঠিক করেছিলেন আদালত।
সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।
এ বিষয়ে গত বছরের জানুয়ারির শেষ দিকে ‘স্যার, আমি জাহালম, সালেক না’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে প্রথম আলো। সেটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত।
এরপর ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুদকের ব্যাখ্যা জানতে কমিশনের চেয়ারম্যানের মনোনীত প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করেন। কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না এবং তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বণোদিত একটি রুলও জারি করা হয়।
এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আদালতের আদেশে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।
পাটকল শ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দুদক। তবে, হাইকোর্টে দুদকের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন।
কিন্তু দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩টি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্রসহ (সিএস) যাবতীয় নথি তলব করেন হাইকোর্ট। দুদকের কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলে, ইঁদুর ধরতে না পারলে সেই বিড়ালের প্রয়োজন নেই।
জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে জীবনযাপন করছেন- তার মুখ থেকে তা শুনতে তাকে আদালতে নিয়ে আসতে আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্টের এই বেঞ্চ। সে অনুযায়ী জাহালম ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন।
এরপর দুদক গত ২১ এপ্রিল হাইকোর্টের ওই বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে যায়। ওই আবেদনের শুনানি করেই স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন চেম্বারজজ আদালত।
আজ চেম্বারজজ আদালতের স্থগিতাদেশ স্থগিত করলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।