বছরের পর বছর ধরে চলে আসা ‘ফৌজদারি বিবিধ’ (ক্রিমিনাল মিস কেস) মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতি সম্প্রতি এক অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় তিনি হাইকোর্টের ১৬টি বেঞ্চকে অর্পিত এখতিয়ারের অতিরিক্ত দায়িত্বভার অর্পণ করেন। এরপর প্রথম সাড়ে তিন মাসেই হাইকোর্টের বিচারপতিরা তাদের নিরলস পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে মামলা নিষ্পত্তিতে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৪৯৮ ধারার অধীনে থাকা ৮০ হাজার ৭৩৪টি পুরনো ফৌজদারি বিবিধ মামলা নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের ১৬টি বেঞ্চকে অতিরিক্ত দায়িত্বভার দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ওইসব মামলা নিষ্পত্তিতে হাইকোর্টের বিচারপতিরা তাদের দায়িত্ব পালন শুরু করেন। জানা গেছে, গত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত হাইকোর্টের ওই ১৬টি বেঞ্চ পুরানো ৮০ হাজার ৭৩৪টির মধ্যে ৪১ হাজার ৪৬৪টি মামলা নিষ্পত্তি করে নজির গড়েছেন।
মামলাগুলো নিষ্পত্তির দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতিরা হলেন— বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ, বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি মো. মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি মো. ফারুক (এম ফারুক), বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার, বিচারপতি এএনএম বসির উল্লাহ, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, শেখ মো. জাকির হোসেন, বিচারপতি মো. হাবিবুল গণি। তবে বর্তমানে বিচারপতি মো. ফারুকের (এম ফারুক) নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ ছাড়া অন্য ১৫টি বেঞ্চ ফৌজদারি বিবিধ মামলা নিষ্পত্তিতে কাজ করছেন।
সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ঝুলে থাকার কারণে সরকারের মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়। পাশাপাশি বিচারপ্রার্থীদেরও মানসিক কষ্টে ভুগতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলার কারণে একেকটি মামলার নথিপত্র রাখতে জায়গারও সঙ্কুলান হয় না।’
মামলা নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এটি একটি ভালো উদ্যোগ। যারা বিচারপ্রার্থী, তাদের জন্য এমন উদ্যোগ আনন্দের। কারণ, দীর্ঘদিন একটি মামলার শুনানি ঝুলে থাকা বিচারপ্রার্থীর জন্য মানসিক কষ্টের। তাই যত দ্রুত সম্ভব মামলা নিষ্পত্তি করা উচিত, তাতে রায়টি যে পক্ষেই যাক না কেন। এতে করে বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।’
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম আমিন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মূলত প্রধান বিচারপতিই মামলা শুনানির জন্য বেঞ্চগুলোকে সুসংগঠিত করে দেন। তাই প্রধান বিচারপতি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, তা সফল হয়েছে বলে মনে করি।’
রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি দায়িত্বভার পাওয়ার পর ফৌজদারি বিবিধ মামলা নিষ্পত্তিতে একটি চমৎকার পদক্ষেপ নেন। এরই অংশ হিসেবে হাইকোর্টের ১৬টি বেঞ্চকে প্রধান বিচারপতি বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে প্রায় ৮০ হাজারের বেশি মামলা নিষ্পত্তির দায়িত্ব দেন। এ দায়িত্ব ছিল সংশ্লিষ্ট ১৬টি বেঞ্চের বিচারপতিদের নিয়মিত কার্যক্রমের অতিরিক্ত দায়িত্ব। বিচারপতিরাও এ বিষয়ে যথেষ্ট কষ্ট করে চলেছেন। দায়িত্ব পাওয়ার সাড়ে ৩ মাসের মধ্যেই যারা সফলতার সঙ্গে মোট মামলার অর্ধেক নিষ্পত্তি করেছেন। আশা করছি, চলতি বছরে এসব মামলাসহ নিয়মিত মামলার নিষ্পত্তির হারও অনেক বৃদ্ধি পাবে।’
সারাদেশের আদালতে বিচারাধীন মামলা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিম্ন আদালতগুলোতে বিচারাধীন দেওয়ানি মামলা রয়েছে ১৩ লাখ ২১ হাজার ৩৮টি এবং ফৌজদারি মামলা রয়েছে ১৭ লাখ ১১ হাজার ৬১৮টি। আর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে ২১ হাজার ৮১৩টি এবং হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৬৬৪টি মামলা। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন