জমি সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ কিংবা জমি ক্রয়-বিক্রয়, মামলা-মোকদ্দমা পরিচালনার ক্ষেত্রে খতিয়ান বা পর্চার ধারণা এদেশের মানুষের নিত্যদিনের আবশ্যকীয় বিষয়। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে, ভূমির খতিয়ান বা পর্চার ধারণা বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। জমিজমাকে কেন্দ্র করে যে কোন সময় দেখা দিতে পারে বিরোধ, আর এই বিরোধ থেকেই দায়ের হচ্ছে সিংহভাগ দেওয়ানী মোকদ্দমা, পিছিয়ে নেই ফৌজদারী মামলাও। তাই যে সকল আইনজীবী দেওয়ানী মোকদ্দমা পরিচালনা করতে ইচ্ছুক বা ব্যাংকিং প্র্যাকটিস করতে আগ্রহী শুধু সেই সকল আইনজীবদের জন্যই ভূমির খতিয়ান বা পর্চা সম্পর্কিত জ্ঞান আহরণ করা জরুরী নয় বরং সকলেই এই জ্ঞান আহরণে একটু সচেতন হলেই এ ঝামেলা থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন অ্যাডভোকেট মাহফুজার রহমান ইলিয়াস।
ভূমি জরিপ সম্পর্কে ধারণা
ভূমি ও ভূমির মালিকানা বিষয়ে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের সাহায্যে নকশা প্রস্তুত, মালিকানা সংক্রান্ত রেকর্ড ও পরিসংখ্যান প্রণয়ন এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়াকেই ভূমি জরিপ বলে। মূলত স্বত্বলিপি প্রস্তুত করার জন্য এই জরিপ পরিচালিত হয়। ভূমির উপর কার কি রূপ অধিকার তা নিরূপন, ভোগ, ক্রয়-বিক্রয়, নিষ্পত্তি বা ভূমি ব্যবহারের অধিকার নির্দেশ করে, রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধায়নে প্রস্তুত এরূপ আইন স্বীকৃত সর্বজনগ্রাহ্য দলিলের নাম হচ্ছে স্বত্বলিপি (খতিয়ান) বা রেকর্ড অব রাইট্স।
এই উপমহাদেশে বিশেষ করে বাংলাদেশ অঞ্চলে প্রথম বিজ্ঞানসম্মত ভূমি জরিপ পরিচালিত হয় মূলত ১৮৭৫ সালের বেঙ্গল সার্ভে এ্যাক্ট এবং ১৮৮৫ সালের বেঙ্গল টেনান্সী এ্যাক্ট এর বিধান অনুসারে। পরবর্তীতে ভূমি জরিপ প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৯১৭ সালের টেকনিক্যাল রুলস এর নির্দেশ অনুযায়ী মৌজা ভিত্তিক প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৯১৭ সালের টেকনিক্যাল রুলস এর নির্দেশ অনুযায়ী মৌজা ভিত্তিক নকশা এবং ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধিমালা এবং ১৯৩৫ সালের সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট (এস.এস) ম্যানুয়ালের বিধান অনুসারে ভূমির মালিকানা সম্পর্কিত খতিয়ান (স্বত্বলিপি) বা ভূমির রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়। সুনির্দিষ্ট আইন ও বিধির অনুযায়ী সরকার কর্তৃক প্রকাশিত গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ভূমি জরিপ পরিচালিত হয়ে থাকে।
বিভিন্ন জমিদারের জমিদারী সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ নিরসন করার নিমিত্তে ১৮৪৬ সাল হতে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত সময়ে থাকবাস্ট জরিপ নামে একটি জরিপ কার্য পরিচালিত হয়। এর মাধ্যমে জমিদারী এলাকার সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এ জরিপে ভূ-সম্পত্তি ও রাজস্ব এলাকার সীমানা সুচিহ্নিত করা হয়। থাকবাস্ট জরিপ কোন বিজ্ঞানসম্মত জরিপ ছিল না। তাই এ ভূমি জরিপ সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিহীন বা সন্তোষজনক ছিল না। এই জরিপের উপর ভিত্তি করে রেভিনিউ সার্ভে নামে আরও একটি জরিপ পরিচালনা করা হয়। এ জরিপকে প্রথম বিজ্ঞান ভিত্তিক জরিপ বলা হয়। কারণ তখনই প্রথমবারের মত এ দেশে দক্ষ আমিন নিয়োগের মাধ্যমে জরিপ কাজ পরিচালিত হয়। তবে তা সত্ত্বেও এই জরিপ বর্তমান সময়ের মত পূর্ণাঙ্গ জরিপ ছিল না।
এ দেশের কৃষকদের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি ও আন্দোলনের ফসল হিসেবে ১৮৮৫ সালের বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন (বেঙ্গল টেনান্সী এ্যাক্ট) প্রণীত হয়। এই আইনের ১০১ ধারার ১নং উপ-ধারায় ভূমি জরিপ করে রায়াতের (প্রজা) অধিকার সম্বলিত খতিয়ান বা রেকর্ড অব রাইট্স প্রণয়ন করার বিধান রাখা হয়। এ বিধানের ভিত্তিতে ১৮৮৮ সনে বর্তমান চট্টগ্রামের রামু থানায় প্রথমবারের মত বিজ্ঞানসম্মত ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে (সি.এস) জরিপ শুরু হয়।
ভূমি জরিপ এমন একটি কার্যক্রম যা দক্ষ কর্মী বাহিনীর মাধ্যমে বিধিসম্মত সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে কোন সুনির্দিষ্ট এলাকার ভূমি খন্ড সরেজমিনে পরিমাপ করে এর আয়তন ও ভৌগলিক অবস্থান নির্ণয় করা এবং তার মাধ্যমে একটি জরিপ এলাকার মৌজা নকশা প্রস্তুত ও নকশা প্রতিখন্ডে ভূমির মালিক দখলদারের পরিচিতি ও ঠিকানা, ভূমির শ্রেণীবিভাগ, ভূমির সুনির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করে মালিকের জন্য নির্ভরযোগ্য খতিয়ান প্রস্তুত করা। এ ভূমি জরিপকেই প্রচলিত ভাষায় বলা হয় সেটেলমেন্ট অপারেশন।
প্রচলিত কিছু জরিপ প্রদ্ধতি
১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৮৭৫ সালের বেঙ্গল সার্ভে এ্যাক্ট, ১৯৩৫ সালের সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট এ্যাক্ট, ১৯৫৫ সালের প্রজাস্বত্ব বিধিমালা, ১৯৫৭ সালের টেকনিক্যাল রুলস, ১৯৫৮ সালে জি.ই.ম্যানুয়াল ও ১৯৯০ সালের ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল এবং এতদ্বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধি-বিধান অনুযায়ী আমাদের দেশে বিভিন্ন সময়ে পরিচালিত বিভিন্ন জরিপ নিম্নরূপ :
১। সি.এস জরিপ (Cadastral Survey)
ক্যাডাস্ট্রাল ফরাসী শব্দ ক্যাডাস্ট্রার (Cadestre) হতে উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। এর অর্থ হলো ভূমি সংক্রান্ত রেজিস্ট্রার। অনেকের মতে, এটি ল্যাটিন শব্দ ক্যাপিটেস্ট্রাম (Capitastrum) হতে উৎপত্তি। কোন মৌজার প্রতিটি ভূমি খন্ড সরেজমিন জরিপ করে এর অয়তন, অবস্থান ও ব্যবহারের ধরণ চিহ্নিত করে ঐ মৌজার একটি প্রতিচ্ছবিমূলক নকশা প্রস্তুত করা এবং ভূ-খন্ড সমূহের প্রত্যেকটির মালিক, দখলকারের বিবরণ সম্বলিত খতিয়ান প্রনয়ণ করাই ছিল ক্যাডাস্ট্রাল জরিপের মূল লক্ষ্য। এর দ্বারা একটি পরিপূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ জরিপকে বুঝানো হয়। জরিপ করার মাধ্যমে একটি মৌজার পৃথক মালিকানাধীন প্রত্যেক ভূমি খন্ডের প্রকৃত পরিমাপ ও পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। অতঃপর জরিপকৃত ভূমিসমূহের মালিক বা শরিকগণের নামে একটি রেজিস্টার (খতিয়ান) প্রস্তুত ও সংরক্ষণ করা হয়।
বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইনের ১০১(১) ধারার বিধান মোতাবেক বর্তমান বাংলাদেশ (পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা ও সিলেট ব্যতীত) ১৮৯০ সাল হতে ১৯৪০ সাল পর্যন্ত ৫০ বছর সময়ে একই সাথে কয়েকটি করে জেলাকে এই কার্যক্রমের আওতাভূক্ত করে সমগ্র বাংলাদেশে জরিপ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে এর পূর্বে ১৮৮৮ সালে পরীক্ষামূলকভাবে কক্সবাজার জেলার রামু থানায় এই জরিপ কার্যক্রম শুরু হয়।
সি.এস খতিয়ান চেনার কৌশল
সি.এস খতিয়ান দেখতে উপর-নীচ লম্বালম্বী হয়। দেখতে অনেকটা লিগ্যাল সাইজের কাগজের মত। এই খতিয়ান উভয় পৃষ্ঠায় সম্বলিত। যেহেতু বৃটিশ আমলে পরগণা ছিল, তাই সি.এস খতিয়ানের প্রথম পৃষ্ঠায় উপরে পরগণা কথা লেখা থাকবে এবং অপর পৃষ্ঠায় দাগ ও জমির পরিমান, জমির রকম কলামের পাশেই উত্তর সীমানার মালিকের পরিচয় উল্লেখ থাকবে। খতিয়ানের প্রথম পৃষ্ঠায় দুইটি ভাগ আছে, উপরের অংশে জমিদারের এবং নীচের অংশে প্রজা বা রায়তের নাম ঠিকানা ও হিস্যা উল্লেখ থাকে, যা অন্য কোন জরিপে থাকে না।
২। এস.এ জরিপ (State Acquisition)
১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে সরকার জমির মালিকানা অধিগ্রহণ করে। কিন্তু সরকার জমিদারের নিকট হতে কি পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করেছে এবং তার ক্ষতিপূরণ নির্ধারণের জন্য ১৯৫৬ সাল থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে স্বল্প পরিসরে একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে। যাকে এস.এ জরিপ নামে আখ্যায়িত করা হয়। এই জরিপের মাধ্যমে মালিক জমিদারের নাম এবং প্রত্যেক ভূ-খন্ডের দখলদার প্রজার নামের তালিকা প্রস্তুতের পর তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এই সময় প্রজা সাধারণকে সরকারের অধীনে মালিকের মর্যাদা প্রদান করা হয় এবং ভূমির মালিকানার সর্বোচ্চ সীমা সকলের জন্য ১০০ বিঘা সীমাবদ্ধ করা হয়। এস.এ জরিপে সকল মালিকের নামে হস্ত লিখিত খতিয়ান প্রস্তুত করা হয় এবং সরকারকে প্রদেয় খাজনার পরিমাণ নির্ধারণ করে তা খতিয়ানে উল্লেখ করা হয়। এই খতিয়ানকে এস.এ খতিয়ান বলা হয়। এই খতিয়ান এম.আর.আর (Modified Rent Roll) এবং পি.আর.আর (Provisional Rent Roll) নামেও পরিচিত। এই জরিপ কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল পুঙ্খানুপুঙ্খ সংশোধনী জরিপের মত সরেজমিনে করা হয়নি। জমিদারদের মাধ্যমে পূর্বে প্রণীত সি.এস জরিপের উপর ভিত্তি করে এস.এ খতিয়ান দ্রুততার সাথে প্রস্তুত করা হয়েছিল বিধায় এই জরিপ শতভাগ বিশুদ্ধ হয় নাই।
এস.এ খতিয়ান চেনার কৌশল
এস.এ খতিয়ান এক পৃষ্ঠার ল্যান্ডস্কেপ বা ডানে-বামে আড়াআড়ি হয়। এই খতিয়ানের অধিকাংশই হস্তলিখিত, তবে ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী কিছু এলাকায় প্রিন্টেড এস.এ খতিয়ান পাওয়া যায়। এই পর্চায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অংশীদারদের ষোল আনা অংশ প্রাপকদের মাঝে পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়নি। উপরের বাম পার্শ্বে সাবেক এবং এর নিচে হাল লিখে খতিয়ান নম্বর লিখা থাকতে পারে কিংবা শুধু সাবেক লিখা থাকতে পারে। সর্বশেষে মন্তব্য কলাম ও তার পার্শ্বে রাজস্ব কলাম অবস্থান করে।
৩। আর.এস জরিপ (Revisional Survey)
ভূমি রাজস্ব প্রশাসন তদন্ত কমিটির পরামর্শ মোতাবেক ১৯৫০ সালের জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের বিধান অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তান সরকার বিশ বছরের প্রেক্ষিতে পরিকল্পনার আওতায় সমগ্র দেশে সংশোধনী জরিপ কাজ সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালের মধ্যে সমগ্র দেশে জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ৫ম খন্ড কার্যকর হওয়ার পর সরকার খতিয়ান হালনাগাদের উদ্দেশ্যে সংশোধনী জরিপ (আর.এস) কার্যক্রম গ্রহণ করেন।
১৯৬৫-৬৬ সনে রাজশাহী জোনে প্রথম সংশোধনী কাজ শুরু করা হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পাবনা, কুষ্টিয়া ও ময়মনসিংহ জোনে সংশোধনী জরিপ (আর.এস) শুরু হয়। এর মধ্যে রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও কুষ্টিয়া জোনের চূড়ান্ত প্রকাশনার কাজ সমাপ্ত করে রেকর্ডপত্র জেলা প্রশাসকের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
আর. এস খতিয়ান চেনার কৌশল
আর. এস খতিয়ান সর্বত্রই প্রিন্টেড এবং এটি দেখতে ল্যান্ডস্কেপ হলে এক পৃষ্ঠায় হবে, আর উপর-নিচ হলে দুই পৃষ্ঠা সম্বলিত উভয় প্রকারই হতে পারে। এই খতিয়ানে অংশ কলামে ষোলআনা অংশ মালিকদের নামে আলাদা আলাদা বণ্টন করে উল্লেখ করা থাকবে। এতে অংশ কলাম ও রাজস্ব কলাম পাশাপাশি অবস্থান করে। ১৯৮২ সনের পরের আর. এস খতিয়ানে থানা কথাটির পার্শ্বে উপজেলা শব্দটি লিখা থাকবে।
৪। বি.এস জরিপ (Bangladesh Survey)/ সিটি জরিপ (City Survey)
বি. এস খতিয়ান বা বি. এস জরিপ হলো মূলত বাংলাদেশ সার্ভে এর সংক্ষিপ্ত রূপ। ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন অনুযায়ী এই জরিপ কার্য পরিচালিত হয়। ১৯৯৮-৯৯ সাল হতে বর্তমানে চলমান জরিপকে বি. এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ বলা হয়। যাহা এখনও সারা দেশে চলমান। শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরীতে বি. এস খতিয়াকে সিটি জরিপ বলা হয়। এই সিটি জরিপের আরেক নাম ঢাকা মহানগর জরিপ। আর. এস জরিপের পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৮ সাল থেকে এ জরিপের উদ্যোগ নেয়। এ যাবৎকালে এটিই হলো আধুনিক ও সর্বশেষ বিজ্ঞানসম্মত জরিপ বলা হয়।
বি. এস খতিয়ান/সিটি জরিপ চেনার কৌশল
বি. এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ এক পৃষ্ঠার ল্যান্ডস্কেপ বা ডানে-বামে আড়াআড়ি হবে এবং জরিপের পর্চা শতভাগ কম্পিউটার প্রিন্টেড হবে। এই খতিয়ানে জমির ধরণ যেমন নাল, পুকুর ইত্যাদি উল্লেখ থাকবে। খতিয়ানটিতে মোট ১২টি কলাম থাকবে। বি. এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ দেখতে অনেকটাই একই রকম। সিটি জরিপ শুধুমাত্র ঢাকা মহানগরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এই খতিয়ানের উপরে বি. এস খতিয়ান বা সিটি জরিপ কম্পিউটারে টাইপকৃত থাকবে।
৫। সিলেট জরিপ (Sylhet Survey)
সম্রাট আকবরের আমলে ভূমি জরিপ কাজ শেষ হবার পরে ১৭৮৭ সালে মিঃ লিন্ডসে সিলেট অঞ্চলে জরিপ করেন এবং খাজনা পুনঃনির্ধারণ করেন। ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন জারি কালে সিলেট তার অর্ন্তভূক্ত ছিল না। তাই সিলেট জেলা সি.এস জরিপ কার্যক্রমের আওতাভূক্ত হয়নি। জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন জারি হওয়ার পূর্বে প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৩৬ এর ১১৭ধারা মোতাবেক ৭ জুন ১৯৫০ সালের আর. এস ৩৬১৫ নং বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সিলেট জেলায় প্রথমবারের মত ক্যাডাস্ট্রাল জরিপের মাধ্যমে রেকর্ড তৈরির কাজ শুরু হয়। ১৯৫৬ সালে আর. এস ৪৫১১ নং বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই জরিপ কার্যক্রমকে ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে এস. এ জরিপ কার্যক্রমে অর্ন্তভূক্ত করা হয়। ফলে সিলেট জেলায় এস. এ জরিপটি ছিল একটি নিয়মিত ক্যাডাস্ট্রাল জরিপ।
৬। দিয়ারা জরিপ
বাংলাদেশে প্রতি বছরেই নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় বিপুল পরিমাণে ভূমি নদীগর্ভে বিলীন (সিকস্তি) হয়, আবার প্রচুর পরিমাণে নতুন চরও জেগে (পয়স্তি) ওঠে। এ চরে পূর্বে নদীগর্ভে বিলীন হওয়া সিকস্তি ভূমি পুনরায় জেগে উঠতে পারে আবার নতুন ভূখন্ডও হতে পারে। দরিয়া শব্দ হতে দিয়ারা শব্দের উৎপত্তি। দিয়ারা বলতে সমুদ্র বা বড় নদীতে জেগে ওঠা চর বা জমিকে বুঝানো হয়। দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে চরের জমির নকশা ও খতিয়ান প্রস্তুত করাকে বুঝায়। ১৯৫০ সালের জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন মোতাবেক নদী পয়স্তি জমি সরকারের খাসজমির পরিমান বৃদ্ধির একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বিশেষ প্রকারের জমির রেকর্ড করা হয় দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে।
মূলত ১৮৬২ সনে বর্তমান সুন্দরবন এলাকায় জরিপ কাজ পরিচালনার জন্য বা নকশা প্রস্তুত করার জন্য তৎকালীন বৃটিশ সরকার দিয়ারা জরিপ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে দেশের যে সকল এলাকায় নিয়মিত নদী ভাঙ্গনের কারণে ভৌগলিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে শুধুমাত্র সেইসব এলাকায় নকশা ও রেকর্ড প্রস্তুতের কাজে দিয়ারা জরিপকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
লেখক: আইনজীবী ও কর্ণধার মাহফুজ লিগ্যাল সলুশন্স। ই-মেইল: iliyashmr@gmail.com