ড. মোঃ নায়ীম আলীমুল হায়দার:
সাধারণত ডাক্তারদের ভুল ও অবহেলার প্রশ্ন ওঠে যখন কোনো রোগীর চিকিৎসার কোনও এক পর্যায়ে জটিলতা বা বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় শুধু তখনই। সম্প্রতি অল্প সময়ের ব্যবধানে চিকিৎসায় “অবহেলা” বা ভুলজনিত কারণে রোগীর মৃত্যুর বেশ কিছু অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসেছে। বরাবরের মতো এ নিয়ে রোগীর লোকদের সাথে হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের গোলযোগ, হাতাহাতি ঘটেছে, থানা পুলিশ জড়িত হয়েছে এবং হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও নার্সদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে চিকিৎসা অবহেলা একটি নিয়মিত বিষয় হয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে চিকিৎসা অবহেলার জন্য নানা ধরণের সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। উক্ত দিক গুলো নিয়ে আজকের আলোচনা।
সংবিধান হচ্ছে আইনের মূল উৎস। বাংলাদেশের জনগনের অধিকার রক্ষায় মূল আইন হচ্ছে এই সংবিধান। উক্ত সংবিধানে চিকিৎসা অবহেলার প্রতিকার সরাসরি দেয়া না থাকলেও পরোক্ষ ভাবে নানা দিক নির্দেশনা দিয়েছে। সংবিধানে চিকিৎসা সেবাকে একটি মৌলিক চাহিদা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদে চিকিৎসা সেবা যে একটি মৌলিক চাহিদা তা তুলে ধরা হয়েছে, যেমন অনুচ্ছেদ ১৫ তে জনগণের মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৫ (ক) এ বলা হয়েছে রাষ্ট্র জনগণের অন্ন, বস্ত্র, আশ্রয়, শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ জীবনধারণের মৌলিক উপকরণের ব্যবস্থা করবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮ তে জনগণের জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ১৮(১) এ বলা হয়েছে, জনগণের পুষ্টির স্তর-উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্র অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবেন এবং বিশেষতঃ আরোগ্যের প্রয়োজন কিংবা আইনের দ্বারা নির্দিষ্ট অন্যবিধ প্রয়োজন ব্যতীত মদ্য ও অন্যান্য মাদক পানীয় এবং স্বাস্থ্যহানিকর ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধকরণের জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন৷ সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদে নাগরিক ও সরকারী কর্মচারীদের কর্তব্য সম্পর্কে বলা হয়েছে। অনচ্ছেদ ২১ (১) এ বলা হয়েছে, সংবিধান ও আইন মান্য করা, শৃঙ্খলা রক্ষা করা, নাগরিকদায়িত্ব পালন করা এবং জাতীয় সম্পত্তি রক্ষা করা প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য৷
২১ (২) এ বলা হয়েছে, সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য৷ বলা যেতে পারে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫, ১৮ ও ২১ এ চিকিৎসা সেবা সম্পর্কে কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ এ যদিও সরাসরি চিকিৎসা সেবা কে স্বীকৃতি দেয়া হয় নি তারপর ও অনুচ্ছেদ ৩২ যদি ব্যাপক ভাবে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে দেখা যাবে চিকিৎসা সেবার সাথে জীবন রক্ষা বা জীবন ধারনের একটি শক্তিশালী সম্পর্ক রয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩২ এ বলে হয়েছে, জীবন ও ব্যাক্তি – স্বাধীনতার অধিকার রক্ষন নিয়ে। অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না। তাহলে বলা যেতে পারে চিকিৎসা সেবাকেও আমরা মৌলিক অধিকার এর একটি বিষয় হিসেবে সুরুক্ষা দিতে পারি। সেক্ষেত্রে, চিকিৎসা অবহেলা হলে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০২ অনুযায়ী উচ্চ আদালতে রিট অথবা জনস্বার্থে মোকদ্দমা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে ফৌজদারি আইনের কোথাও নির্দিষ্ট করে চিকিৎসা অবহেলার কথা উল্লেখ নেই। কিন্তু দণ্ড বিধি ১৮৬০ এ কিছু শাস্তির কথা বলা হয়েছে যেখানে চিকিৎসা অবহেলার বিষয়গুলো আসতে পারে। দণ্ডবিধির ধারা ২৭৪ এ ঔষধে ভেজাল মিশ্রণ এর শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা অর্থ দণ্ড ১,০০০ টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবার কথা বলা হয়েছে। ধারা ২৭৬ এ কোন ঔষধকে ভিন্ন ঔষধ বলে বিক্রয় করা হলে তার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে সর্বচ্চো ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা অর্থ দণ্ড ১,০০০ টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবার কথা বলা হয়েছে। ধারা ২৮৪ তে বিষাক্ত বস্তু নিয়ে অবহেলামূলক আচরণ এর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। যেখানে সর্বচ্চো ৬ মাসের কারাদণ্ড অথবা অর্থ দণ্ড ১,০০০ টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবার কথা বলা হয়েছে। ধারা ৩০৪ ক তে অবহেলার দ্বারা মৃত্যু সংঘটন সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। ধারা ৩১২ তে গর্ভপাত ঘটানোর শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। ধারা ৩২৩ এ ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত করার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১ হাজার টাকা অর্থ দণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। ধারা ৩২৫ এ ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত করার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। ধারা ৩৩৬ এ অন্যান্য ব্যক্তির জীবনের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক কাজ করার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। ধারা ৪১৬ এবং ধারা ৪১৮ তে প্রতারণার শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া দণ্ড বিধির ৮৮ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, রোগীর সম্মতি নিয়ে কোন চিকিৎসা করার পর রোগীর ক্ষতি বা মৃত্যুর জন্য চিকিৎসককে দায়ী করা যাবে না। আবার ধারা ৯২ তে বলা হয়েছে চিকিৎসক সহজ সরল মনে চিকিৎসা করার পড় রোগীর ক্ষতি হলে চিকিৎসক দায়ী থাকবেনা।
দেওয়ানী আইনে মাধ্যমে ও চিকিৎসা অবহেলার প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। দেওয়ানী কার্যবিধি ১৯০৮ এ কিছু দিক নির্দেশনা দেয়া আছে। যেমন ধারা ৯ এ বলা আছে, “নিষেধ না থাকিলে আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী মোকদ্দমার বিচার করিবেন”। অর্থাৎ চিকিৎসা অবহেলার মোকদ্দমা বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতে ও বিচারের জন্য আসতে পারে। ধারা ১৯ এ বলা হয়েছে কোন ব্যাক্তির যদি অন্য কোন ব্যাক্তির কারনে ক্ষতি হয় তাহলে উক্ত ক্ষতি পুরনের জন্য এখতিয়ার ভুক্ত আদালতে যেতে পারবে। এছাড়া টর্ট আইনে চিকিৎসা অবহেলার প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। টর্ট কারও কর্তব্যবিচ্যুতির কারণে ঘটিত অপরের ক্ষতিজনিত দেওয়ানী অপরাধ। আইনি কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে অবহেলা বা কর্তব্যবিচ্যুতির কারণে এধরনের ক্ষতি ঘটে থাকে।অপরাধীকে অপরাধে নিরুৎসাহিত করা এবং ব্যক্তিগত ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ আদায় হলো টর্ট আইনের উদ্দেশ্য। এ প্রতিকার কেবল কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধেই নয়, আইনগতভাবে গঠিত যেকোন সংস্থার বিরুদ্ধেও প্রযোজ্য। কোনো ব্যক্তি দৈহিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে সে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারে এবং দেওয়ানী আদালত আর্থিক ক্ষতিপূরণের আদেশ দিতে পরে। অবহেলা, উপদ্রব, স্বেচ্ছায় মিথ্যা বিবরণ প্রদান, অবৈধ প্রবেশ, ভুল কারাবন্দিকরণ, প্রবঞ্চনা বা মানহানি ইত্যাদির জন্যও এসব মামলা হতে পারে। আইনসঙ্গত কাজ হিসেবে শহরের আবর্জনা ও বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের অবহেলা টর্ট জাতীয় অন্যায়। অনুরূপভাবে কোনো চিকিৎসক রোগীর চিকিৎসায় অবহেলা করলে এবং সেজন্য রোগীর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে কিংবা কোনো উকিলের অবহেলার দরুন মক্কেলের সম্পত্তির ক্ষতি হলে এগুলোও টর্ট বলে গণ্য হবে।
এছাড়া ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইন ২০০৯ এর মাধ্যমেও আইনি প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। উক্ত আইনের ধারা ২ (২২) অনুযায়ী টাকার বিনিময়ে কোন রোগী যদি চিকিৎসা সেবা নেয় তাহলে সেই রোগী উক্ত আইন অনুযায়ী ভোক্তা হিসেবে স্বীকৃতি পাবেন। উক্ত আইনের ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে, যে ধরণের সেবা দেবার ওয়াদা করা হয়েছিল যদি ঠিক সেইরকম সেবা ভোক্তাকে প্রদান করা না হয় সে ক্ষেত্রে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্ববোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। উক্ত আইনের ৫২ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে কেউ যদি ভোক্তার জীবন বা নিরাপত্তার জন্য হুমকির পরিবেশ তৈরি করে তাহলে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্ববোচ্চ ১ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অপরদিকে ৫৩ ধারায় বলা হয়েছে, অবহেলার কারনে ভোক্তার টাকা, স্বাস্থ্য ও জীবনের ক্ষতি হলে দায়ী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান সর্ববোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর মাধ্যমেও চিকিৎসা অবহেলার প্রতিকার পাওয়া যেতে পারে। যদি উক্ত কাউন্সিল কোন চিকিৎসা অবহেলার প্রমাণ পায় তাহলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এর নিবন্ধন বাতিল করতে পারে। উক্ত আইনের ২৩ ধারায় চিকিৎসক এর নিবন্ধন বাতিলের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। উপরোক্ত আইন গুলো ছাড়াও আরো কিছু আইন আছে যে গুলো স্বাস্থ্য সেবার বা চিকিৎসা সেবার সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন; ভ্যাকসিনেশন আইন ১৮৮০, ঔষধ(ড্রাগস) আইন,১৯৪০, মেডিকেল প্রাকটিস এন্ড প্রাইভেট ক্লিনিক এবং ল্যাবাটরিস অধ্যাদেশ ১৯৮২, ফার্মেসি অধ্যাদেশ ১৯৭৬, ঔষধ (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ, ১৯৮২, বাংলাদেশ. ইউনানী অ্যান্ড আয়ুর্বেদিক প্র্যাকটিশনার্স অধ্যাদেশ ১৯৮৩, মানবদেহে অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ১৯৯৯, নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন আইন ২০০২ ইত্যাদি। এছাড়া ‘চিকিৎসা সেবা ও সুরক্ষা আইন-২০১৮’ নামে একটি আইন কার্যকর হবার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। উক্ত আইনটি কার্যকর হলে চিকিৎসা অবহেলার বিষয়টি কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমার কিছু অভিমত তুলে ধরলাম;
১। বিদ্যমান চিকিৎসা অবহেলা বা চিকিৎসা সংক্রান্ত যে আইন গুলো রয়েছে তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষরা তেমন অবগত নয় তাই উক্ত আইন গুলো যুগোপযোগী করে সাধারণ মানুষদের কাছে পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
২। বাংলাদেশে চিকিৎসা অবহেলার জন্য সুনির্দিষ্ট কোন আইন এখন পর্যন্ত প্রণয়ন করা হয় নি তাই সরকারের উচিত চিকিৎসা অবহেলা সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট আইন খুব দ্রুত প্রণয়ন করা।
৩। চিকিৎসা সেবার সাথে যেসব পেশাজীবীরা জড়িত তাদের জবাবদিহিতার অভাব রয়েছে ফলে চিকিৎসা অবহেলা প্রায়ই হচ্ছে। এজন্য তাদেরকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪। বিএমডিসির তেমন কার্যকর ভূমিকা দেখা যায় না চিকিৎসা অবহেলা প্রতিরোধ এর ক্ষেত্রে। তাই বিএমডিসির উচিত হবে আরো শক্ত ভূমিকা পালন করা চিকিৎসা অবহেলা কমিয়ে আনার জন্য।
৫। রোগী ও রোগীর স্বজনরা তাদের আইনগত অধিকার সম্পর্কে তেমন ধারণা রাখে না। তাই তাদের অধিকার গুলো বেশি বেশি গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে হবে। এতে চিকিৎসা অবহেলার প্রতিকার পেতে সহজ হবে।
৬। টর্ট আইন বাংলেদেশে তেমন প্রয়োগ করা হয় না। কিন্তু উন্নত দেশ গুলোতে চিকিৎসা অবহেলার জন্য বেশির ভাগ মামলা টর্ট আইন এর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয় এতে খুব কার্যকর প্রতিকার পাওয়া যায়। বাংলেদেশের বিচার ব্যবস্থায় উক্ত আইনটি যত বেশি ব্যবহার করা হবে ততই ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ লাভবান হবে। তার জন্য বিচারক, আইনজীবী ও বিচার প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট সবার একসাথে কাজ করতে হবে।
৭। ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তদন্ত প্রক্রিয়ার সাথে যারা যুক্ত আছে তাদের চিকিৎসা অবহেলা এবং এর আইনি প্রক্রিয়ার সাথে তাদের শিক্ষা, জ্ঞ্যান, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির অভাব রয়েছে ফলে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ যথাযথ প্রতিকার পায় না। তাই বিচার বিভাগ ও পুলিশ বিভাগের সদস্যদের চিকিৎসা অবহেলা সংক্রান্ত বিষয়ে আরো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত।
৮। চিকিৎসা অবহেলা সংক্রান্ত রিট বা জনস্বার্থে মোকাদ্দমার ক্ষেত্রে অনেক সময় সরকার পক্ষের সহযোগিতা পাওয়া যায় না। এর জন্য সরকার পক্ষের আরো সহযোগিতা করা উচিত যাতে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষ সঠিক প্রতিকার পায়।
৯। চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত মামলার জন্য বাংলাদেশে আলাদা কোন আদালত বা ট্রাইবুনাল এখন পর্যন্ত হয় নি। যে হারে চিকিৎসা অবহেলা বা ভুল চিকিৎসার ঘটনা ঘটছে তাতে সরকারের উচিত হবে মামলা গুলো দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আলাদা বিশেষায়িত আদালত বা ট্রাইবুনাল প্রতিষ্ঠা করা।
১০। সাধারণ জনগণের চিকিৎসা অবহেলার আইনি প্রতিকার সম্পর্কে যথাযথ ধারণা বা তথ্য নেই। এই ক্ষেত্রে সভা, সেমিনার, আলোচনা সভা ইত্যাদির আয়োজন বেশি বেশি করতে হবে। পাশা পাশি গণমাধ্যমে ও এই প্রচারণার ক্ষেত্রে গুরুত্তপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
সব পেশাতেই কম বেশি অবহেলার অভিযোগ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে চিকিৎসা অবহেলা বা ভুল চিকিৎসা একটি অতি সাধারণ বিষয় হয়ে গিয়েছে। প্রায় প্রতিদিন কোন না কোন গণমাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে জানতে পারছি। চিকিৎসা পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট যারা আছেন তারা কেউ কেউ অধিক মুনাফা, গাফিলতি বা আইন না মানার কারনে চিকিৎসা অবহেলা করে চলেছেন। এই পেশাগত অবহেলার কারনে ক্ষতিগ্রস্থ পক্ষের জীবন বা সম্পদের ক্ষতিসাধন হচ্ছে। বাংলাদেশে চিকিৎসা অবহেলার প্রতিকার পাবার জন্য সাংবিধানিক, দেওয়ানী, ফৌজদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বিদ্যমান আইনি ব্যবস্থায় নানা ধরণের সমস্যা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সবশেষে বলা যায়, বাংলাদেশে চিকিৎসা অবহেলার প্রতিরোধ বা প্রতিকার এর জন্য সরকারের আইনসভা, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগকে একসাথে কাজ করতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, আইন ও বিচার বিভাগ, নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ