ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যার মামলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়েছে। একইসঙ্গে মামলাটির পরবর্তী তারিখ ১০ জুন ধার্য করেছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন মামলাটি পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার চার্জশিট শুনানির জন্য ২১ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) চট্টগ্রাম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো. ইকবালসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরে কোর্ট পরিদর্শক গোলাম জিলানী গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার নুসরাত হত্যা মামলায় গ্রেফতার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগ্নি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং নুসরাতের মাদ্রাসার সহ সভাপতি রুহুল আমিনকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন মামলার পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এর নথি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে বুধবার (২৯ মে) এই আদালতে মামলার চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম।
গত ১০ এপ্রিল থেকে শুরু করে ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে মামলাটির তদন্ত কাজ শেষ হয়ে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। পিবিআইর ৮২২ পৃষ্ঠার এই চার্জশিটে এজহারনামীয় আটজন এবং এজহার বহির্ভূত তদন্তে প্রাপ্ত আরও আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে ইতোমধ্যেই সুপারিশও করা হয়েছে।
৯২ জন সাক্ষী মামলাটি প্রমাণ করবেন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। মামলায় সাতজন সাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২ আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে বিজ্ঞ আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। এছাড়া এ মামলায় ২১ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়।
মামলাটির বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম শাহজাহান সাজু গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ১৬ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেছেন। এ মামলায় ২১ জন গ্রেফতার আছেন। বৃহস্পতিবার আদালত ১৬ জনকে রেখে বাকি পাঁচজনকে নট সেন্ট আপ করেছেন। নট সেন্ট আপ করা আসামিরা হলেন, যাদের পিবিআই চার্জশিট থেকে বাদ দিয়েছে। তারা হলেন- নুর হোসেন, আলাউদ্দিন, কেফায়েত উল্লাহ জনি, সাইদুল এবং আরিফুল ইসলাম। এই পাঁচজনকে নিয়ে যদি এজহারকারীর আপত্তি থাকে, তবে আমরা নারাজি দেবো। তা না হলে পিবিআইয়ের এই চার্জশিট গ্রহণ করতে আদালতকে বলবো। ইতোমধ্যে আদালত চার্জশিট গ্রহণ করেছেন। এখন বিচারিক আদালত অর্থাৎ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যাতে চার্জশিট পাঠানো হয়, সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নেবো।
এ মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের, জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।
গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের অপরাধে মাদ্রাসাটির অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।