আইমান রহমান খান :
রাজধানীর আইনপাড়া প্রতিদিন মুখরিত থাকে হাজার হাজার আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের সমাগমে। রোদ, ঝড় বৃষ্টি ও শত বাধা সত্ত্বেও আইনজীবীরা তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করেন না। আদালতকক্ষে জায়গা না পেলে বাহিরে রোদে দাঁড়িয়ে থাকাটাও তারা সহ্য করে যান নীরবে। কারণ এই আদালতপাড়া তাদের দ্বিতীয় বাসস্থান।
গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে সাধারণ তাপমাত্রা ৩৮° থেকে ৪২° ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করে। তাই আদালতকক্ষে শুধুমাত্র ফ্যান আর জানালা খুলে রাখলেও কাজ হয়না। মানুষের ভিড়ে এই কক্ষগুলা একেকটা জলন্ত চুলায় পরিণত হয়। ঢাকা জজ কোর্টের এতগুলো কক্ষের মধ্যে মাত্র তিনটি কক্ষে এয়ারকন্ডিশনারের ব্যবস্থা আছে, তার উপরে কেবল একটির এসি কার্যকর আছে। আদালত চলাকালীন সময় প্রায় কোন কক্ষই খালি থাকেনা তাই বিশ্রামের জন্য একটু জায়গা আশা করাও বোকামি।
ঢাকা জজ কোর্টে ১০/১৫ বছর ধরে প্রতিদিন আইনপেশা পরিচালনা করেন এমন মানুষের সংখ্যা অনেক। এবং সদ্য সনদপ্রাপ্ত অনেকে এই আদালতকেই বেছে নিয়েছেন তাদের কর্মস্থল হিসেবে। অথচ আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ৬-৭ টা ভবন সম্বলিত আদালত প্রাঙ্গনে আইনজীবীদের বিশ্রাম নেওয়ার মত একটি কক্ষও নেই। তাই দিন দিন এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় বিশ্রামাগারহীন কোর্ট প্রাঙ্গন আইনজীবীদের জন্য হয়ে উঠছে অসহনীয়।
ঢাকা জজ কোর্টে বিশ্রামগার না থাকাটা আইনপেশাও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কারণ দিনের বেলার রোদের তাঁপ এতোটাই প্রকট আকার ধারন করে যে অনেকেই তারাতাড়ি বাড়ি ফিরে যায়। ফলে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে তাদের কার্যক্ষমতা ও দক্ষতা। যারা সাহস করে দুপুরবেলাটা কোনরকম পাড় করে দেন, তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো অসুস্থ হয়ে পরেন৷ গরমে অনেক সিনিয়র আইনজীবী হিট স্ট্রোক করে বেহুশ হয়ে পড়লে মারাত্বক শারিরীক ঝুঁকির সম্মুখীন হন।
একটি বিশ্রামগার অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারে। শুধুমাত্র আইনজীবী ও শিক্ষানবিশরা এই রুমে প্রবেশ করবে। আদালতপাড়ার অন্তর্ভুক্ত এই রুমটিতে ৫০ জন মানুষ একত্রে অবস্থান করতে পারবে যেখানে ৫ টন এর দুটি এসি থাকবে আর বসার জন্য থাকবে নরম গদির সোফাসেট আর চেয়ার। থাকবে ঠান্ডা খাবার পানির ফিল্টার। সিনিয়রদের সুবিধার্থে রুমটি নিচতলায় অবস্থিত হবে যাতে তারা খুব সহজেই যাতায়াত করতে পারেন। রুমের চার পাশে থাকবে কোট/গাউন রাখার আলনা আর ফাইলপত্র রাখার জন্য কেবিনেট। অনেক আইনজীবী আছেন, বিশেষকরে যারা আদালতপাড়ায় চেম্বার নেননি, তারা কাজ শেষে এখানে এসে বিশ্রাম নিতে পারবেন।
উল্লেখ্য, যে বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে ‘এডভোকেট’স লাউঞ্জ’ নামে একটি রুম আছে যা শুধুমাত্র আইনজীবীদের ব্যবহারের জন্য। এই লাউঞ্জে প্রায়শই সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবীরা অবসরে বসে থাকেন। ঢাকা জজ কোর্টের অবকাঠামোর দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের এই বিষয় নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আইনজীবীদের কল্যাণে আইনজীবীদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। এতে সমগ্র আদালতপাড়ার চিত্রই পালটে যাবে।
লেখক : অ্যাডভোকেট, ঢাকা জজ কোর্ট