নিরাপদ পণ্যে ও খাদ্যের মান নির্ণয়ের জন্য ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষকে আগামী দুই মাসের মধ্যে হটলাইন কার্যক্রম চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া শুধু ঈদ বা রোজাতেই নয়, সারাবছর ঢাকাসহ গ্রামের হাট বাজারেও তাদের অভিযান চালাতে বলেছেন আদালত।
আজ রোববার (১৬ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় বাজারে থাকা নিম্নমানের ৫২ পণ্যের বিষয়ে শুনানিতে এ আদেশ দেন আদালত।
এর আগে সকালে আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া নামি-দামি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের (সাবস্ট্যান্ডার্ড) ৫২ পণ্য বাজার থেকে দ্রুত সরাতে না পারার ব্যাখ্যা দিতে রোববার (১৬ জুন) সকালে আদালতে হাজির হন মাহফুজুল হক। পণ্যগুলো বাজার থেকে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান তিনি।
আদালত তার কাছে জানতে চান ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের কেন কোনো হটলাইন নেই?। এসময় বিচারক জানান, তিনি নিজেই এর ভুক্তভোগী। আগামী দুই মাসের মধ্যে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষকে হটলাইন চালুর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ সময় বিএফএসএ চেয়ারম্যান জানান, আনুষ্ঠানিক হটলাইন নম্বর চালু না করা পর্যন্ত ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮ নম্বরটি ভোক্তা অধিকারের অভিযোগ প্রদান নম্বর হিসেবে থাকবে।
এরপর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হককে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তার প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩ টি অভিযান করতে হবে বলেও নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত বলেন, সরকারের সাথে আমাদের বিরোধ নেই। আদালত চায় খাদ্য নিরাপদ হোক। শুধু ৫২টি পণ্য নয়, বাজারে সব ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সম্প্রতি রমজান উপলক্ষে বিএসটিআই ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় বিএসটিআই।
বিএসটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৫২ নিম্নমানের পণ্য বাজার থেকে প্রত্যাহারের জন্য গত ৬ মে আইনি নোটিশ পাঠায় কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটি। নোটিশ অনুযায়ী বাজার থেকে প্রত্যাহার চেয়ে গত ৯ মে ওই সোসাইটির পক্ষে জনস্বার্থে আদালতে রিট দায়ের করেন হাইকোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান।
গত ১২ মে রিটের শুনানি নিয়ে বাজার থেকে এসব পণ্য সরিয়ে নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে পণ্যগুলো বাজার থেকে তুলে নিয়ে ধ্বংসের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই সঙ্গে ওই আদেশ বাস্তবায়ন করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে ২৩ মে বৃস্পতিবার প্রতিবেদন দেয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। প্রতিবেদনে ৫২ পণ্যের একটির প্যাকেটও জব্দ করার বিষয়টি না থাকায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত অবমাননার রুল জারি করে তাকে তলব করেন।