জীবিকার তাগিদে কেউ চাকরি করে কেউবা করে ব্যবসা। ব্যবসা আবার এককভাবে কিংবা কয়েকজন মিলে করা যায়। সহজ ভাষায় একাধিক ব্যক্তি যৌথ মালিকানায় কোন ব্যবসা শুরু করলে তাকে অংশীদারি কারবার বলা হয়ে থাকলেও অংশীদারি ব্যবসার ক্ষেত্রে কিছু আইনগত বিষয় অনুসরণ করতে হয়। আইনানুযায়ী অংশীদারি কারবার (Partnership Business) কি এবং এর গঠন পদ্ধতি? কোন কোন ব্যক্তি অংশীদার হতে পারবে এবং কারা পারবে না? এসব বিষয় নিয়ে লিখেছেন মো. মাহমুদুল হাসান (ফারুক)।
অংশীদারী কারবার কি
যে সকল ব্যাক্তি অংশীদারি কারবার গঠন করে তাদের প্রত্যেককে বলা হয় অংশীদার (partner)। এবং এই অংশীদারগণ যে সংগঠনের মাধ্যমে করবার পরিচালনা করে সেই প্রতিষ্ঠানকে অংশীদারি প্রতিষ্ঠান বা firm বলে।
১৯৩২ সালের অংশীদারি আইন মোতাবেক, দুই বা ততোধিক ব্যাক্তি যাহা সর্বোচ্চো ২০ জন (ব্যাংকিং ব্যাবসার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চো দশ জন) দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে চুক্তির ভিত্তিতে যখন মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে কোন বৈধ কারবার গঠন করে তাকে অংশীদারি কারবার ( Partnership Business) বলা হয়। অংশীদারদের মধ্যে শুধু চুক্তির মাধ্যমেই কারবার অংশীদারিত্ব সৃষ্টি হতে পারে।
অংশীদারি কারবার (Partnership Business) এর গঠন পদ্ধতি
১। কারবারের উদ্দেশ্যে একত্রিত হওয়াঃ
দুই বা সর্বোচ্চো ২০ জন (ব্যাংকিং কারবারে ১০) ব্যাক্তি সেচ্ছায় বৈধ কারবারের পরিচালনার উদ্দেশ্যে, লাভ- লোকসান বন্টনের শর্তে সর্বপ্রথম একত্রিত হওয়ার মাধ্যমে অংশীদারি কারবারে সুত্রপাত ঘটে।
২। চুক্তি সম্পাদন করাঃ
মূলধন সরবাহের পরিমাণ, লাভ-লোকসান বন্টনের হার,পারস্পারিক অধিকার ইত্যাদি চুক্তি লিখিত বা মৌখিক হতে পারে।তবে লিখিত হওয়া সর্ব উত্তম।
৩। চুক্তি রেজিস্ট্রেশনঃ
অংশীদারি কারবার নিবন্ধন বা registration বাধ্যতামূলক নয়।তবে ভবিষ্যৎতের বিভিন্ন রকম আইনি ও অনান্য জামেলা এড়ানোর জন্য অবশ্যই চুক্তিনামা রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করা প্রয়োজন।
৪। ট্রেড লাইসেন্সঃ
কারবারি প্রতিষ্ঠান পৌর এলাকার ভিতরে হলে পৌরসভা থেকে ট্রড লাইসেন্স নিতে হবে।তবে পৌর এলাকার বাইরে কারবার হলে সাধারণত ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয় না।
৫। অনান্য সরকারি দফতরের অনুমতিঃ
কারবারের প্রকৃতি অনুযায়ি। যেমনঃআমদানি কিংবা রপ্তানি ব্যাবসার জন্য সরকারের ” প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন বিভাগ কর্তৃক ইস্যুকৃত লাইসেন্স প্রয়োজন হয়।
৬। কারবার শুরু করণঃ
উৎপাদনে ক্রয়-বিক্রয় বা সেবা প্রদানের মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে কারবার শুরু করা হয়।
কোন কোন ব্যাক্তি অংশীদারি কারবারে অংশীদার হতে পারবে এবং কারা পারবে না
১। নাবালক ছেলে কিংবা মেয়ে।
২। দেউলিয়া বা দেউলিয়ার জন্য দরখাস্তকারী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান।
৩। বিকৃতি মস্তিস্ক সম্পন্ন কোন ব্যাক্তি ( পাগল,অপ্রকৃতিস্থ ব্যাক্তি)
৪। শত্রু দেশের নাগরিক ( যে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব নেই)
৫। যৌথ মূলধনী কোম্পানি বা সমবায় সমিতি।
মোট কথা, চুক্তি আইনের ১১ ধারা অনুযায়ী চুক্তি করার অযোগ্য ব্যক্তিগণ অংশীদার হইতে পারবে না।
এবং
উপরোক্ত সকল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ছাড়া যেকোন ব্যক্তি বা অসীম দায়যুক্ত প্রতিষ্ঠান অংশীদারি কারবারের অংশীদার হতে পারবে।
আমি চেষ্টা করেছি অংশীদারি কারবারের গুরত্বপূর্ণ আইনি বিষয় তুলে ধরার জন্য। এঈ লেখার মাধ্যমে যদি কেউ সামান্যতম উপকৃত হয় সেটাই হবে প্রাপ্তি। কারণ আমি মনে করি, আইনি জটিলতায় পড়ে সমস্যা সমাধানের চেয়ে, যেনো আইনি জটিলতায় না পড়তে হয়, সেই জন্য সমস্যা হওয়ার পূর্বেই আইন জেনে রাখা উত্তম।
সকল পাঠকের প্রতি রইল নিরন্তর শুভকামনা।
লেখক : শিক্ষানবিশ আইনজীবী, ময়মনসিংহ জজ কোর্ট।