সম্প্রতি কুমিল্লায় চোর ও ছিনতাইকারী চক্রের ৫ সদস্যকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। যদি প্রশ্ন উঠে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের আওতাভুক্ত নয় এমন অপরাধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক সাজা প্রদান কতটা ন্যায়সঙ্গত? সাধারণ জ্ঞান সম্পন্ন যে কোন মানুষই বলবে যে, এটা আইনত অবৈধ। অথচ মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলভুক্তই না এমন অপরাধেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজা প্রদান করে থাকেন! যেমন চুরি অপরাধে সাজা প্রদানের এখতিয়ার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের না থাকলেও আমাদের দেশে জনস্বার্থের দোহাই দিয়ে এহেন বেআইনি কর্ম চলমান। বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন এস. এম. শরিয়ত উল্লাহ্
অপরাধ যা-ই হোক আইনানুযায়ী গ্রেপ্তারের পর পুলিশ অবিলম্বে আসামীকে আদালতে হাজির করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ কিভাবে আসামী গ্রেফতার করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে যায়? তারা কি আইনের তোয়াক্কা করে না, না-কি আইন জানে না? যেটাই হোক তা অপরাধ। এ ধরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। কেননা ফৌজদারী কার্যবিধির ধারা-৬০, ৬১ এবং ১৬৭ মোতাবেক পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করার পর অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট (বিঃদ্রঃ আইন অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট বলতে “জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট”-কে বোঝায়) এর সামনে উপস্থিত করবে এবং ম্যাজিস্ট্রেট এর আদেশ ছাড়া কাউকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আটক রাখতে পারবে না। তাহলে, পুলিশ কোন আইনে, কিভাবে গ্রেফতারকৃতদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নিয়ে গেল?
এরপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোন আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শাস্তি প্রদান করলেন? মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী শুধুমাত্র মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে সংঘটিত অপরাধ অপরাধী স্বীকার করলেই কেবল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাস্তি দিতে পারে। কাউকে ধরে এনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে উপস্থাপন করে তার বিচার করার কোন সুযোগ মোবাইল কোর্ট আইনে নেই। এটা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট তথা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কাজ। তারপর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চুরির অপরাধে তাদেরকে সাজা প্রদান করলেন। আশ্চর্জজনক ব্যাপার! চুরির অপরাধ তো মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলভুক্তই না। অর্থাৎ, এই অপরাধ আমলে নেয়ারই কোন সুযোগ মোবাইল কোর্টের নেই।
পুলিশ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তো আইন অনুযায়ী চলতে বাধ্য। কিন্তু, এখানে তারা কিভাবে কি করলেন। এভাবে চললে কদিন পর দেখা যাবে মার্ডার কেসের বিচারও তারা করে বসেছেন। দ্রুত বিচার সবাই চাই। কিন্তু সে বিচার প্রক্রিয়া হোক আইন এবং সংবিধান মেনে। মৃত্যুদন্ডযোগ্য অপরাধ (যেমন খাদ্যে ভেজাল ইত্যাদি) এর জন্য ১০ হাজার, ২০ হাজার টাকা জরিমানা কোন বিচার না। বিচারের নামে পরিহাস এবং অপরাধী লালন। প্রচার সর্বস্ব বিচারের পরিসমাপ্তি ঘটুক। আর, অপরাধী হলেও তাকে বেআইনি উপায়ে সাজা দেয়ার সুযোগ সংবিধান কাউকে দেয় নি। এমনও তো হতে পারে যে, পুলিশ যাদের ধরে এনেছে তারা বা তাদের সবাই প্রকৃত অপরাধী নয়। তাই, সবাইকে আইনের আশ্রয় লাভের সাংবিধানিক সুযোগ দিতে হবে। বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন কোনভাবেই সহনীয় বা প্রশংসনীয় হতে পারে না।
লেখক: সহকারী জজ, পাবনা