মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তযোদ্ধাদের বয়স ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ন্যূনতম ১২ বছর ছয় মাস নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত করেননি আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। ফলে আপাতত মুক্তযোদ্ধাদের বয়স নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানি নিয়ে আজ বুধবার (১৯ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার জজ বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়েছেন। আগামী ২৩ জুলাই এর শুনানি হবে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন ও ব্যারিস্টার ওমর সাদাত। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে গত ১৯ মে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ছয় মাস নির্ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংশোধিত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। আদালত বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোথাও মুক্তিযোদ্ধাদের বয়সের ফ্রেমে বাঁধা যায় না।’
হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। পরে ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল আবেদন করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
ওইদিন ব্যারিস্টার ওমর সাদাত বলেছিলেন, ‘পরিপত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল, যার ধারাবাহিকতায় অনেক মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আটকে গিয়েছিল। কিন্তু আদালত আজ তাদের (১৫ জন রিটকারীর) সেই বকেয়া ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে আজকের এ রায়টি গুরুত্বপূর্ণ।’
আদালত বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই, এটি একেবারেই অপরিবর্তনীয়।’
আদালত আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে সংজ্ঞা দেয়ার কিছু নেই। এটি ঐতিহাসিক সাক্ষীর ভিত্তিতে কে মুক্তিযোদ্ধা আর কে মুক্তিযোদ্ধা না তা নির্ধারণ হবে। মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধাই। এখানে তর্কের কোনো অবকাশ নেই।’
এর আগে ২০১৮ সালের বিভিন্ন সময় একাধিক রিটের শুনানি নিয়ে আদালত ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ছয় মাস নির্ধারণ করে সংশোধিতপরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না- এ মর্মে রুল জারি করা হয়।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা সচিব, যুগ্ম সচিব, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ সচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
২০১৮ সালের ১৭ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক পরিপত্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১৩ বছরের স্থলে ১২ বছর ছয় মাস নির্ধারণ করা হয়। পরে এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে ১৫ জন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করেন।
২০১৬ সালে প্রথমে গেজেট প্রকাশ করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৩ বছর। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি একটা পরিপত্রের মাধ্যমে সে গেজেট সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস।