পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস এই আদেশ দেন।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বুধবার (১৯ জুন) আদালত এক আদেশে ডিআইজি মিজানের তিনটি ফ্ল্যাট, তিনটি প্লট, দুইটা দোকান ক্রোক করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ডিআইজি মিজানের একটা ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মাহমুদ হোসেন জানান, দুদকের পরিচালক মঞ্জুর মোর্শেদ গত মঙ্গলবার ডিআইজি মিজানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ রাখার আবেদন করেন। ওই আবেদনের পক্ষে তিনি আদালতে শুনানি করেন। শুনানি শেষে আদালত এই আদেশ দেন।
নারী নির্যাতনের অভিযোগে ওঠার পর পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মিজানুর রহমান।
দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন বলেন, ডিআইজি মিজানের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধান চলছে। ডিআইজি মিজানের স্থাবর সম্পদ ক্রোক এবং অস্থাবর সম্পদক ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা না গেলে তা হস্তান্তর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। শুনানি নিয়ে আদালত মিজানের স্থাবর সম্পদ এবং ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) । কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান।
মাস ছয়েক ধরে দুজনের মধ্যে এ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমে ২৫ লাখ ও পরে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন মিজানুর। কিন্তু ২ জুন খন্দকার এনামুল বাসির মিজানুরকে জানান, তিনি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারের চাপে তাঁকে অব্যাহতি দিতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিজানুর টাকাপয়সা লেনদেনের সব কথা ফাঁস করে দেন। প্রমাণ হিসেবে হাজির করেন এনামুল বাসিরের সঙ্গে কথোপকথনের একাধিক অডিও রেকর্ড। এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রচার করে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজ।
এনামুল বাছির অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছেন, অডিও রেকর্ডটি বানোয়াট। তিনি টাকাপয়সা নেননি। তিনি গত মাসের শেষ দিকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এবং মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করেছেন।
অন্যদিকে মিজানুর রহমান বলেছেন, তিনি খন্দকার এনামুল বাছিরকে একটা স্যামসাং ফোন কিনে দিয়েছিলেন শুধু তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য। তাঁর গাড়িচালক হৃদয়ের নামে সিমটি তোলা। এতে দুজনের কথা ও খুদে বার্তা বিনিময় হয়েছে।
ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাঁকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তখন তাঁর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদ পাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে মিজানুরকে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। মিজানুরের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসংগতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা দুদকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তদন্ত শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দুদক পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার এই অভিযোগ পাওয়া গেল।