জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের শুনানি আগামী সপ্তাহের মধ্যে হবে। খালেদার করা জামিন আবেদন দ্রুত শুনানির জন্য উপস্থাপন করলে জামিন আবেদনটি এ সপ্তাহে বা আগামী সপ্তাহে শুনানির জন্য কজলিস্টে আসবে বলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের জানান আদালত।
আজ রোববার (২৩ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান।
গত ৩০ এপ্রিল সাজার বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য এ মামলার সব নথিপত্র তলব করে হাইকোর্ট। আদালতের আদেশ অনুযায়ী ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. আখতারুজ্জামানের আদালত থেকে এসব নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে আসা প্রায় সোয়া ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে খালেদা জিয়াসহ চার আসামির সবাইকে সাত বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে গত বছর ২৯ অক্টোবর রায় হয়। পাশাপাশি তাদের ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয় রায়ে।
ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার চারদিন পর গত বছর ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টে আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। ৬৩৮ পৃষ্ঠার মূল রায়সহ প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠার এই আপিলের সঙ্গে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জামিন আবেদনও করা হয়।
গত ৩০ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে দেয়া দণ্ড বাতিল ও খালাস চেয়ে খালেদা জিয়ার করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। পাশাপাশি বিচারিক আদালতের রায়ে দেয়া অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দের আদেশে স্থিতাবস্থা দেন আদালত। তবে, এই মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি শুনানি করেননি আদালত।
ওইদিন জামিনের আবেদন নথিভুক্ত করে দুই মাসের মধ্যে মামলার নথি তলব করা হয়। নথি পাওয়ার পর জামিনের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে বলেও সেদিন জানান আদালত। শুনানিতে জামিনের বিষয়ে আদালত বলেন, ‘সাত বছরের সাজার মামলায় আমরা জামিন দেই না, তা না। যেহেতু অন্য একটি মামলায় উচ্চতর আদালত সাজা বাড়িয়ে দিয়েছেন। ওই মামলায় জামিন না হলে তিনি মুক্তি পাবেন না। ফলে বিষয়টি জরুরি দেখছি না। নথি আসুক, তখন জামিনের আবেদনটি দেখা হবে। এ মামলায় রেকর্ড না দেখে বেইল (জামিন) দিচ্ছি না।’
সেদিন শুনানিতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেছিলেন, ‘আবেদনটি একটু শোনেন মাই লর্ড, না শুনলে আমরা হতাশ হবো।’ তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘না, এখন শুনতে পারব না। শুনলে আদেশ দিতে হবে।’
এর আগে ২৩ এপ্রিল বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করলে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ ৩০ এপ্রিল আপিলের গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন। এর ধারাবাহিকতায় ওইদিন বিষয়টি শুনানি করা হয়।
২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ওই মামলায় রায় ঘোষণা করেন পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক। রায়ে ওই মামলায় খালেদা জিয়া ছাড়া অপর তিন আসামিকেও সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ ছাড়া প্রত্যেককে ১০ লাখ টাকা করে অর্থদণ্ড দেয়া হয়। খালেদা জিয়াকেও ১০ লাখ টাকা জরিমানা এবং ট্রাস্টের নামে কেনা কাকরাইলের ৪২ কাঠা জমি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দেন আদালত।
ওই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে আপিল করলে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন এবং নিম্ন আদালতের নথি তলব করে দুই মাসের মধ্যে হাইকোর্টে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা করা হয়। এ ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে দুদক এ মামলা করে।
উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, হত্যা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, মানহানি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিসহ ৩০টিরও বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় রায় হয়েছে।
দুর্নীতি মামলায় দণ্ডিত হয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বর্তমানে অসুস্থতাজনিত কারণে কারা হেফাজতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন তিনি।