দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে সগিরা মোর্শেদ হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম স্থগিত থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এজন্য রাষ্ট্রের পাশাপাশি বিচার বিভাগও দায় এড়াতে পারেন না। বিলম্বিত বিচার মানে বিচারকে অস্বীকার করার নামান্তর।
আজ রোববার (২৩ জুন) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
আবেদনে এই মামলার বিচার স্থগিত সেই মারুফ রেজার আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, উনি (মারুফ) তো এই মামলায় আসামি বা সাক্ষী নন, কোনো তালিকায় তাঁর নাম নেই। তাহলে কীভাবে নিম্ন আদালতের অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করলেন। আপিল বিভাগের রায়ও আছে যে, অধিকতর তদন্তের আদেশ স্থগিত করা যাবে না। মামলার যেকোনো অবস্থায় বিচারিক আদালত অধিকতর তদন্তের আদেশ দিতে পারেন।
মারুফ রেজার আইনজীবী ওবায়দুর রহমান বলেন, সম্প্রতি গণমাধ্যমে এই মামলা নিয়ে প্রতিবেদন দেখেছি। অনেক পুরাতন মামলা। যে নথিপত্র আমাদের কাছে রয়েছে তা থেকে বিষয়টি জানার চেষ্টা করছি। এরপর ২৮ বছর আগে অধিকতর তদন্তের জন্য ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের দেওয়া আদেশ আদালতে পড়ে শোনান তিনি।
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, অধিকতর তদন্তের আদেশে আপনার মক্কেল কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলো এবং এ ধরনের রিভিশন মামলার করার আইনগত এখতিয়ার তার ছিল কি না, সেটা আপনাকে ব্যাখ্যা করতে হবে।
তখন ওই আইনজীবী বলেন, কোর্ট যেভাবে চান সেভাবেই আদালতকে আমরা সহযোগিতা করব।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট ফরহাদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, মারুফ রেজার অবস্থা এমন যে, ঠাকুর ঘরে কে রে আমি কলা খাই নাই। যার নাম এজাহারে বা অভিযোগপত্রে নেই তিনি কীভাবে অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিভিশন মামলা করলেন? মারুফ রেজা খুনের ঘটনায় জড়িত বলেই বিচার স্থগিতের জন্য ওই আবেদন করেছেন। আদালত বলেন, দীর্ঘ শুনানির কোনো সুযোগ নেই। বুধবার রুলের ওপর চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করা হবে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, সগিরা মোর্শেদ সালাম (৩৪) ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীতে ছিনতাইকারীর গুলিতে মারা যান। এ ঘটনায় ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের স্বামী সালাম চৌধুরী। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রিকশাচালক দুজনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু নামের এক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ডিবি পুলিশ। সাক্ষ্য চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলাটি অধিকতর তদন্তের আদেশ দেন ঢাকার একটি আদালত। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন মারুফ রেজা। ওই বছরের ২ জুলাই হাইকোর্ট মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। এরপর দীর্ঘ ২৮ বছর মামলাটির ওপর স্থগিতাদেশ রয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপক্ষ ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়।