ভারী কাজে নিযুক্ত শ্রমিক ও রিকশাচালকসহ তরুণ সমাজকে ধূমপানমুক্ত করতে কাজ করে যাচ্ছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলাম। সমাজের অবহেলিত ও অসচেতন মানুষ যারা ভারী কাজ করে জীবিকা পরিচালনা করেন, তাদের মধ্যে ধূমপানের মাত্রা বেশি। এসব মানুষ একদিন কাজ করতে না পারলে তাদের পরিবারের সদস্যদের না খেয়ে থাকতে হয়। তাই তাদের সুস্থ থাকা প্রয়োজন। কিন্তু ধূমপানের কারণে এসব মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন, এমনকি দুরারোগ্য রোগেও আক্রান্ত হন। এজন্যই তাদের ধূমপানমুক্ত রাখতে কাজ করছেন এসআই শফিকুল ইসলাম। এই পুলিশ কর্মকর্তা স্বপ্ন দেখেন ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশের।
২০০৩ সাল থেকে একক উদ্যোগে ধূমপানবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম শুরু করেন পুলিশের এসআই শফিকুল ইসলাম। ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তার ১৬ বছরের লড়াইয়ের সঙ্গে দেশের সব জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক মানুষ যুক্ত হয়েছেন, যারা ধূমপানের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের স্বপ্ন বাংলাদেশ একদিন ধূমপানমুক্ত হবে।
এসআই শফিকুল ইসলাম বর্তমানে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বাড্ডা থানায় কর্মরত। ধূমপানের বিরুদ্ধে তার এই লড়াইয়ের শুরুর গল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে একসময় ধূমপান করতাম। এ কারণে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। চিকিৎসকের পরামর্শে ধূমপান ছাড়তে বাধ্য হই। ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো অনুধাবন করতে পেরে এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরির ব্যাপারে ভাবতে থাকি। তবে কীভাবে শুরু করবো প্রথমে বুঝতে পারিনি। তারপরও নিজে নিজে ভেবে লিফলেট, দেয়াল লিখন শুরু করি। পরিচিতদের ধূমপান থেকে বিরত রাখার জন্য এর ক্ষতিকর দিকগুলো তাদের বলতে থাকি। তখন অনেকেই আমার সমালোচনা করতে থাকেন। তাতেও আমি দমে যাইনি। ২০০৩ সাল থেকে আমি ধূমপানবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে আসছি, যা এখনও চলছে।’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের ধূমপানবিরোধী প্রচারণা চলছে। সারাদেশে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত আছে।’
যেভাবে ধূমপানবিরোধী লড়াই শুরু করেছিলেন শফিকুল
২০০৩ সালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ধূমপানের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ নামে একটি সংগঠন করেন শফিকুল ইসলাম। চাকরির বাইরে অবসর সময়টুকু ধূমপায়ী রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ফুটপাতের দোকানদারসহ নিম্ন আয়ের মানুষকে ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো বোঝাতে থাকেন। এমনকি ডিউটি অবস্থায়ও সুযোগ পেলে ধূমপায়ীদের ধূমপান না করার ব্যাপারে সচেতন করার চেষ্টা চালাতেন।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় “ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই” সংগঠনের কমিটি রয়েছে। কমিটির সবাই সেচ্ছায় কাজ করেন। তারা ধূমপানের ক্ষতিকর দিকগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরেন। এছাড়া, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সচেতনতামূলক প্রোগ্রাম হয়। এসব প্রোগ্রামে মেয়র, চেয়ারম্যান ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন। তবে যারা ধূমপান করেন না, তারাই কেবল আমাদের সচেতন কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ‘ধূমপানমুক্ত বাংলাদেশ চাই’ নামে একটি গ্রুপ খুলেছেন শফিকুল ইসলাম। সেখানেও ধূমপানবিরোধী প্রচারণা চালানো হয়ে থাকে।
২০০৪ সালে ঢাকায় র্যাবে যোগদান করেন শফিকুল ইসলাম। তখন র্যাবের পোশাক পরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তিনি মানুষকে ধূমপান ছেড়ে দিতে বলতেন। তিনি বলেন, ‘একজন রিকশাচালক সারাদিন রিকশা চালান। এই কাজে তার অনেক শক্তি অপচয় হয়। ঘেমে ভিজে একাকার এসব মানুষ যাত্রী টানার ফাঁকে ফাঁকে ধূমপান করেন। এতে তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। আমি যখন বাইরে ডিউটি করি, তখন তাদের বুঝানোর চেষ্টা করি। তারা অনেকেই আমাকে ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার কথা দেন।’
শফিকুলের সঙ্গে আরও যারা কাজ করেন
ধীরে ধীরে তার এই সচেতনতামূলক আন্দোলন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। এই আন্দোলনে যুক্ত হতে থাকেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। এসআই শফিকুলের ‘ধূমপানমূক্ত বাংলাদেশ চাই’ সংগঠনে ৩০৩ জন উপদেষ্টা রয়েছেন, যারা বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তা। তারা নিয়মিত শফিকুল ইসলামকে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সারাদেশে ৩৫ হাজার ২০০ মানুষ তার সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে রয়েছেন।