বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের বাকি ৪৫ লাখ টাকা প্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা করে পরিশোধ করতে গ্রিন লাইনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিষয়টি আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।
গ্রিনলাইনের ক্ষতিপূরণের টাকা কমানোর আবেদন নামঞ্জুর করে আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালত বলেন, গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে জরিমানার বাকি ৪৫ লাখ টাকা রাসেলকে দিতে হবে। গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ প্রতি মাসে পাঁচ লাখ টাকা করে রাসেলকে দেবে। প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে ৫ লাখ টাকা পরিশোধ করে সে বিষয়ে ওই মাসের ১৫ তারিখ আদালতকে জানাতে এবং ১৬ তারিখ মামলার শুনানির জন্য নির্ধারণ রেখেছেন আদালত।
আদালতে গ্রিনলাইন পরিবহনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ওজি উল্লাহ। রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন খন্দকার সামসুল হক রেজা। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আলম মাহমুদ বাশার।
এর আগে, গত ২২ মে রাসেল সরকার হাইকোর্টেও জানিয়েছিলেন তাকে টাকা দেওয়া হয়নি। এমনকি গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল না (২০ মে থেকে)। পরে অবশ্য ২২ মে গ্রীনলাইনের আইনজীবী তার ওকালতনামা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
বাসচাপায় পা হারানো রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা দিতে গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে গত ২২ মে হাইকোর্টে শুনানির দিন ধার্য ছিল। শুনানিতে গ্রীনলাইনের এমন আচরণের কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন আদালত। সঙ্গে সঙ্গে এ বিষয়ে ২৫ জুন (মঙ্গলবার) পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
মামলার শুনানি থাকায় মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল ১০টার দিকে হাইকোর্টে আসেন রাসেল সরকার। হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, গত ২২ মে হাইকোর্টের আদেশের পর কোনো ধরনের যোগাযোগ করেনি গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ। ৫ লাখ টাকা দেওয়ার পর বাকি ৪৫ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য আদেশ দিলেও তারা (গ্রীনলাইন) আর কোনো টাকা দেয়নি।
এর আগে গত ২২ মে হাইকোর্টের শুনানিতে গ্রীনলাইনের আইনজীবী মো. ওজিউল্লাহ বলেন, আদালতের সর্বশেষ আদেশের পর গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। তাদের আইনজীবী থেকে আমার নাম প্রত্যাহার করতে চাই। এ সময় পা হারানো রাসেল সরকারের আইনজীবী শামসুল হক রেজা বলেন, আমাদের সঙ্গেও কোনো যোগাযোগ করছে না গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
পরে আদালত বলেন, আমরা অনেক নমনীয়ভাবে কথা বলেছি, গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ কখনও বলে নাই যে আমাদের এই সমস্যা, আমরা এত টাকা দিতে পারব না। আবার রাসেলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টা মীমাংসা করারও চেষ্টা করেনি।
আদালত আরও বলেন, যারা ব্যবসা করে তাদের মানবিক মূল্যবোধ থাকা উচিত। কিন্তু এ ক্ষেত্রে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষের আচরণ আমাদের কাছে ভালো লাগেনি। তারপরও তাদের অনুপস্থিতিতে আমরা আজ আদেশ দিতে চাই না। প্রয়োজনে রুল শুনানির পর যা করার দরকার তাই করব।
এরপর আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য আজ (২৫ জুন) দিন নির্ধারণ করেন এবং এ সময়ের মধ্যে বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য তাগিদাসহ নির্দেশ দেন।
এর আগে গত ১৫ মে আদালত রাসেল সরকারকে টাকা দিতে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষকে ২২ মে পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন আদালত। এর পর তা বাড়িয়ে ২৫ জুন ঠিক করেন।
গত ১০ এপ্রিল রাসেল সরকারকে আদালতের মাধ্যমে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ। বাকি ৪৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে এক মাস সময় দেন আদালত। রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে এর আগে গত ৩১ মার্চ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
গত ১২ মার্চ রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার হাইকোর্টে নির্দেশের পর পরে আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রিন লাইন পরিবহনের বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে রাসেলের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই রাসেলের শরীর থেকে বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।