‘সান্ধ্য কোর্স’ বন্ধ না করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা, জানতে চান হাইকোর্ট
হাইকোর্ট

মালেয়শিয়ায় শ্রমিক পাঠানো সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তের নির্দেশ

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নিয়ন্ত্রণকারী ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট ও তাদের অনিয়ম তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আগামী ১৮ জুলাইয়ের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশে গঠিত তদন্ত কমিটিকে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া, ৯ সদস্যর ওই কমিটি থেকে দুদকের প্রতিনিধি প্রত্যাহার চেয়ে করা আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

এ সংক্রান্ত রিটের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার (২৬ জুন) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো.আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

পরে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন,‘হাইকোর্টের আদেশে সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটিতে দুদকেরও একজন প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। তবে ওই কমিটি থেকে দুদক কর্মকর্তার নাম প্রত্যাহার করতে আবেদন জানানো হলেও তাতে সাড়া দেননি আদালত। এরপর আদালত অন্য একটি আদেশে দুদকের প্রতিনিধিসহ ৯ সদস্যর কমিটিকে সিন্ডিকেটের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন।’

এর আগে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর নিয়ন্ত্রণকারী ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সির সিন্ডিকেট ও এসব সিন্ডিকেটের অনিয়ম তদন্তে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শুধুমাত্র ১০টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থা নিতে সরকারের ব্যর্থতা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ওই ১০টি এজেন্সির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েও রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং সিন্ডিকেট করে চলা সংশ্লিষ্ট ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সিসহ মোট ২০ জন বিবাদীকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এর আগে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যকার চুক্তি উপেক্ষা করে ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বঞ্চিত অন্য ১০টি এজেন্সি হাইকোর্টে রিট দায়ের করে।

পরে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম জানান, বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানির অন্যতম বাজার মালয়েশিয়া ২০০৯ সালে কর্মী নেওয়া বন্ধ করে দেয়। ২০১২ সালে সরকারিভাবে কর্মী পাঠাতে দুই দেশ চুক্তি করে। এরপর আড়াই বছরে সেদেশে আট হাজার কর্মী যান। তবে সাগরপথে অবৈধভাবে বিপুলসংখ্যক লোক মালয়েশিয়ায় যান। ২০১৫ সালের মে মাসে থাইল্যান্ডে এবং পরে মালয়েশিয়ায় গণকবর পাওয়ার পর বিশ্বজুড়ে হইচই হলে আবারও বাংলাদেশ থেকে বেসরকারিভাবে কর্মী নেওয়ার প্রস্তাব দেয় মালয়েশিয়া।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুই দেশের মধ্যে জি টু জি প্লাস (সরকারি-বেসরকারি) সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মালয়েশিয়া জানায়— এই মুহূর্তে তারা আর কর্মী নেবে না। এতে কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া ঝুলে যায়। এরপর ২০১৬ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে আসে। ওই বৈঠকে আবারও কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের একবছর পর ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী পাঠানো শুরু হয়।

জি টু জি প্লাস চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, কর্মী নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়া হয় অনলাইনে। এ কাজের জন্য সিনারফ্ল্যাক্স নামে একটি কোম্পানিকে নিয়োগ দেয় মালয়েশিয়ান সরকার। মালয়েশিয়ান কোম্পানি সিনারফ্ল্যাক্সের সঙ্গে বর্তমানে কর্মী পাঠাতে বাংলাদেশের ১০টি এজেন্সি সিন্ডিকেট তৈরি করে কাজ করছে। এ সিন্ডিকেটের ফলে অন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো কর্মী পাঠানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে, একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগে শ্রমিকদের কাছ থেকে বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে, যার প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয় বলে জানান রিটকারীদের আইনজীবী রাশনা ইমাম।

মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো নিয়ে সিন্ডিকেটের সঙ্গে কাজ করা ১০টি এজেন্সি হলো— ক্যারিয়ার ওভারসিজ, এইচএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স, সানজারি ইন্টারন্যাশনাল, রাব্বী ইন্টারন্যাশনাল, প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম ও আল ইসলাম ওভারসিজ।