একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ও দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা এবং তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাসহ ৭ জনকে হত্যা মামলায় টাঙ্গাইলের রাজাকার মাহবুবুর রহমানের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
এ দিন (বৃহস্পতিবার ) বেলা ১১টায় ২৩৫ পৃষ্ঠার সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শুরু করেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা হত্যা মামলার আসামি টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যাসহ যে তিনটি অভিযোগ আনা হয়। সেই তিনটি অভিযোগেই তাকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
গত বছরের ১২ই ফেব্রুয়ারি মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১১ই ফেব্রুয়ারি অভিযোগ আমলে নেয়ার পর ২৮শে মার্চ আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে বিচার শুরু করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ২৪শে এপ্রিল মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের তথ্য অনুযায়ী, মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি ৭০ বছর বয়সী মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের শান্তি কমিটির সভাপতি বৈরাটিয়া পাড়ার আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। অভিযুক্ত মাহবুবুর রহমান ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।
১৯৭১ সালের ৭ই মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় অভিযুক্ত আসামি টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানে রণদা প্রসাদ সাহা, তাঁর ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ সাতজনকে অপহরণ করে নিয়ে যান। পরে সবাইকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। তাদের মরদেহ আর পাওয়া যায়নি। এ মামলায় অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়।
উপ মহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নারী শিক্ষা ও নারী জাগরণের অগ্রপথিক দানবীর রনদা প্রসাদ সাহার জন্ম টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। আজীবন আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করেছেন তিনি। মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা।
মুক্তিবাহিনীকে সহায়তা ও তার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দেয়ার অপরাধে ৭১সালের ৭মে স্থানীয় রাজাকার মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে রাজাকাররা হত্যাযজ্ঞ চালায় গোটা মির্জাপুরে। তারা সেদিন রণদা প্রসাদ সাহাকে ধরতে আক্রমণ করে তার বাড়ী ও হাসপাতালসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। এ সময় তাকে ধরতে না পেরে রাজাকার বাহিনী জ্বালিয়ে দেয় কয়েকটি গ্রাম। হত্যা করে বহু মানুষকে।
এ রায়ের ফলে জাতিকে দীর্ঘদিনের কলঙ্ক থেকে মুক্ত করার জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসী।