বিনা অপরাধে সাজা খাটা জাহালমের মামলার শুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উদ্দেশ্যে হাইকোর্ট বলেছেন, দুদক থেকে দুর্নীতিবাজ ক্যান্সার বাদ দেন। আমরা দুদককে স্বচ্ছ দেখতে চাই।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
দুদকের উদ্দেশ্যে আদালত বলেন, দুদক থেকে দুর্নীতিবাজ ক্যান্সার বাদ দেন। আমরা দুদককে স্বচ্ছ দেখতে চাই। তারা (দুদক) আরও শক্তিশালী হোক, আমরা সেটা চাই। দুর্নীতিবাজদের জায়গা এটি নয়। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মাদক সন্ত্রাস, দুর্নীতিবাজ- এরা জাতীয় শত্রু, যারা ভালো কাজ করবে, তাদের পুরস্কৃত করেন।
হাইকোর্ট আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির এখন স্বর্ণযুগ চলছে। তাই এখন অর্থনৈতিক ক্রাইম হওয়ার সুযোগ রয়েছে। দুদককে অনেক পাওয়ার দেওয়া হয়েছে। তাই সততা ও স্বচ্ছতার সাথে দুদককে কাজ করতে হবে। দুদক শক্তিশালী না হলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে না। আর দুদকের মাঝে দুর্নীতিবাজ থাকলে সেসব দুর্নীতিবাজ ক্যান্সারগুলোকে ছেঁটে ফেলতে হবে।’
এ সময় সোনালী ব্যাংকের ঋণ-সংক্রান্ত মামলার ভুল আসামি জাহালমের কারাবাসের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কাছে প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ১১ জুলাইয়ের মধ্যে এ প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই দিন এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।
এ সময় জাহালম আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। জাহালমের পক্ষে অ্যাডভোকেট অমিত দাশগুপ্ত এবং দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।
এর আগে গত ১৩ মে জাহালমের বিরুদ্ধে ব্যাংকঋণ জালিয়াতির ৩৩ মামলার এফআইআর, চার্জশিট, সম্পূরক চার্জশিট এবং ব্যাংকের এ সংক্রান্ত নথিপত্র দাখিল করতে দুদককে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় টাঙ্গাইলের পাটকল শ্রমিক জাহালমকে আবু সালেক হিসেবে চিহ্নিত করে মামলা করে দুদক। পরে ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জাহালমকে গ্রেফতার করা হয়।
অন্যের অপরাধে তিন বছর ধরে জেলে থাকা জাহালমকে নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হলে গত ৩ ফেব্রুয়ারি সব মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে জাহালমকে মুক্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
ওই আদেশের কয়েক ঘণ্টা পরই গাজীপুর কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম। এরপর গত ৬ মার্চ জাহালমকে ২৬ মামলায় ভুল আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিলের যাবতীয় নথি তলব করেন হাইকোর্ট।