সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মামলায় মুন সিনেমা হলের মালিক ইতালিয়ান মার্বেল কোম্পানিকে ১০০ কোটি টাকার চেক দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। কিন্তু ওই চেকে ভুল থাকায় তা সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে আগামী ২১ জুলাই পর্যন্ত মামলাটির শুনানি মুলতবি রেখেছেন আদালত।
আজ রোববার (৩০ জুন) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অন্যদিকে, মুন সিনেমা হল মালিকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক নেওয়াজ।
এর আগে ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর পুরনো ঢাকার ওয়াইজ ঘাট এলাকার আলোচিত মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য রবিবার (৩০ জুন) পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। এই সময়ের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট অর্থ মন্ত্রণালয়কে টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন।
তবে এর আগেও ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর মুন সিনেমা হলের মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের যে নির্দেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ, তা পরিশোধে সম্মত হওয়ার কথা জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। এ কারণে এই অর্থ পরিশোধে ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের সময় দিয়েছিল আপিল বিভাগ। কিন্তু পুনরায় সময় আবেদন করায় অর্থ পরিশোধে তাদেরকে রবিবার (৩০ জুন) পর্যন্ত সময় বোড়িয়ে দিয়েছিলেন আপিল আদালত।
প্রসঙ্গত, পুরনো ঢাকার ওয়াইজ ঘাটে অবস্থিত মুন সিনেমা হলের মালিক ছিল ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। পরে ওই সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। পরে ইটালিয়ান মার্বেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদুল আলম এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করেন।
জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ঘোষিত এক সামরিক ফরমানে সরকার কোনও সম্পত্তি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলে, তা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না বলা হয়। ইটালিয়ান মার্বেল কোম্পানি ২০০০ সালে হাইকোর্টে ওই ফরমানসহ সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে।
২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট এ মামলার রায় দেন। তাতে মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার ক্ষমতা গ্রহণ সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয় ২০১০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন। পাশাপাশি ৯০ দিনের মধ্যে ইটালিয়ান মার্বেলকে মুন সিনেমা হল ফেরত দিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ অবস্থায় সম্পত্তি ফিরে পেতে ২০১২ সালের ১০ জানুয়ারি ইটালিয়ান মার্বেল ওয়ার্কস মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেন। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১৫ জানুয়ারি আপিল বিভাগ অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ এক প্রকৌশলীকে দিয়ে ওই জমি ও স্থাপনার মূল্য নির্ধারণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে দিয়ে এই মূল্য নির্ধারণ করতে বলা হয়। পরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। সেই প্রতিবেদন অনুসারে মুন সিনেমা হল মালিককে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পরিশোধে নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।