দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় মানসম্মত ও আবহাওয়া উপযোগী খাবার তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করতে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের করে একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কর্মকর্তাসহ রিটকারী অন্যান্য বিবাদীদের সমন্বয়ে এ কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার (১ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন এ আদেশ দেন।
এক মাসের মধ্যে ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে বিদেশি ও স্থানীয় চা/কফি/উষ্ণ পানীয় পরিবেশনের নীতিমালা করতে নির্দেশ দেন আদালত। পাশাপাশি ওই নীতিমালার আলোকে আগামী ২২ অক্টোবর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ২৪ অক্টোবর মামলার শুনানির জন্য দিন ঠিক করা হয়েছে।
এছাড়াও রুল জারি করেছেন আদালত। রুলে ২০১৪ সালের হোটেল ও রেস্টুরেন্ট আইন অনুযায়ী জেলা প্রশাসক এবং ২০০৯ সালের ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের বিধান অনুযায়ী অভিযোগ পাওয়া পরও পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত সিহিনথাকে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে নাভানা ফুডস লিমিটেডকে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যর্থতায় ক্যাফেটির লাইসেন্স বাতিলের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার জেলা প্রশাসক, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং নাভানা ফুডস লিমিটেডকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম। তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার রিশাদ ইমাম, জুবায়দা গুলশান আরা প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী জিনাত হক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাজমা আফরিন।
জানা গেছে, গ্লোরিয়া জিন’স ক্যাফে নামে ঢাকায় নাভানা ফুডস লিমিটেডের চারটি আউটলেট রয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে সিহিনথা সাবিন খান নামের একজন ক্রেতা গুলশানের গ্লোরিয়া জিন’স ক্যাফেতে দুপুরের খাবার শেষে ক্যাফেটির নিজস্ব ঢাকনাযুক্ত একটি চায়ের কাপ নিয়ে গাড়িতে ওঠেন। তবে গাড়ি ছাড়ার পূর্বেই তিনি কাপটি হাতে নিলে বিস্ফোরণের মতো কাপটি ফেটে তার শরীরে পড়ে। চা অতিরিক্ত গরম হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গেই সিহিনথার পেট ও পায়ের পেছন দিকের কিছু অংশ পুড়ে যায়। এরপর তিনি দৌড়ে গ্লোরিয়া জিন’স ক্যাফেটিতে যান। কিন্তু প্রাথমিকভাবে ক্যাফের কোনো কর্মকর্তা তাকে হাসপাতালে না নিয়ে ঠান্ডা পানি দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেন।
ঘটনার কিছুক্ষণ পরই ভুক্তভোগীর বাবা-মা এসে সিহিনথাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সিহিনথার পোড়া ছিল থার্ড ডিগ্রি বার্ন টাইপের। এ ধরনের বার্ন হতে হলে চায়ের তাপমাত্রা তীব্রতর হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে ওই ক্যাফের চায়ের তাপমাত্রা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন চিকিৎসকরা।
এরপর থেকে ব্যাংকক গিয়ে প্রতি মাসে সিহিনথাকে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। যদিও ঢাকনাযুক্ত ত্রুটিপূর্ণ চায়ের কাপ ও চায়ের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত না থাকার বিষয়টি ক্যাফ কর্তৃপক্ষ কখনো স্বীকার করেনি। তাই চলতি বছর ওই ঘটনার বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যাখ্যা দিতে একটি আইনি নোটিশ দেয়া হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকবার আলোচনা হলেও ক্যাফের মালিকপক্ষ কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হননি।
রিটকারীর আইনজীবী রাশনা ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, বিধান অনুযায়ী জেলা প্রশাসক স্থানীয় হোটেল ও রেস্টুরেন্টের লাইসেন্স দেয়া ও বাতিল করতে পারেন। আবার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অধীনেও এর অধিদফতরকে হোটেল-রেস্টুরেন্ট পরিদর্শন ও ভোক্তাদের অভিযোগ তদন্ত করার বিষয়ে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু রিটকারী সিহিনথার অভিযোগের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন।