বিচারকের সুনাম-দুর্নাম জুডিশিয়ারির সুনাম-দুর্নামের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালত বলেন, জেলা জজ ও সহকারী জজরাও বিচার বিভাগের অংশ। তাদের সুনাম মানে বিচার বিভাগের (আমাদের) সুনাম। আর তাদের দুর্নাম মানে জুডিশিয়ারির (আমাদের) দুর্নাম।
আজ বুধবার (৩ জুলাই) বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত থাকার পরও অশীতিপর রাবেয়া খাতুনের মামলার কার্যক্রম চলমান রাখা ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মো. আল মামুনকে তলব করেছিল হাইকোর্ট। তলবে হাজির হয়ে তিনি আজ আদালতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। এ সময় হাইকোর্ট শত বছর বয়সী নারী রাবেয়ার বিরুদ্ধে থাকা অস্ত্র মামলা স্থগিত করার পরও মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করায় বিচারকের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
আদালতে বিচারক মো. আল মামুনের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি আটর্নি জেনারেল জাহিদ সরওয়ার কাজল।
শুনানিতে এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘নিম্ন আদালতের প্র্যাকটিস পেশকার আদেশ লিখে দেন, বিচারক স্বাক্ষর করেন। আমরা পেশকারকে শোকজ করব। তারপর এ বিষয়ে লিখিতভাবে আদালতকে জানাতে পারব।’
তখন আদালত বিচারককে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আপনারা বিচার বিভাগের অংশ। আপনাদের সুনাম হলে বিচার বিভাগের সুনাম হয়। আবার দুর্নাম হলে বিচার বিভাগের দুর্নাম হয়।’
এ পর্যায়ে বিচারক মো. আল মামুনকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেন আদালত। তবে এ বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যার জন্য আগামী ১৭ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
অন্যদিকে শতবর্ষী বৃদ্ধার আইনজীবী আশলাফুল আলম নোবেল, রাবেয়া খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্র দাখিল করেন।
এর আগে সকালে ব্যাখ্যা দিতে হাইকোর্টে হাজির হন ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারকক মো. আল মামুন।
এর আগে ২৬ জুন তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিতাদেশ থাকার পরও অশীতিপর রাবেয়া খাতুনের মামলার কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তাকে তলব করা হয়। একইসঙ্গে ওই আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউরকে (এপিপি) হাজির হতে বলা হয়।
এর আগে, গত ৩০ এপ্রিল রাবেয়া খাতুনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাটি তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
‘অশীতিপর রাবেয়া: আদালতের বারান্দায় আর কত ঘুরবেন তিনি?’ শিরোনামে গত ২০ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. আশরাফুল আলম গত ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন। এর শুনানি গ্রহণে ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট রাবেয়া খাতুনের বিরুদ্ধে থাকা মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত করেন। মামলার নথি তলবের পাশাপাশি নিম্ন আদালতে থাকা মামলাটি কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দেওয়া হয়।
এরপর গত ১৫ মে হাইকোর্ট এক আদেশে ২৬ জুন রাবেয়ার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তাঁর আইনজীবীকে নির্দেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ অশীতিপর রাবেয়া আদালতে হাজির হন।
আবেদনকারী আইনজীবী আশরাফুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ২০০২ সালে করা ওই মামলায় রাবেয়ার বয়স ৬০ বছর বলা হয়। সে অনুসারে তাঁর বয়স হয় ৭৭ বছর। তবে রাবেয়ার ভাষ্য, তাঁর বয়স ১০৪ বছর।
জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দেন রাবেয়া। মামলা শেষ হয় না। কবে শেষ হবে তাও জানেন না। রাবেয়া বলেন, ‘পুলিশেরে শরবত, মোরব্বা বানাই খাওয়াইছি। তারপরও মামলায় আমারে আসামি বানাইছে। আমি আর বাঁচতে চাই না, মরতে চাই। অনেক দিন ধরে এই মামলায় হাজিরা দেই। আদালত আমাকে মামলা থেকে খালাসও দেয় না, শাস্তিও দেয় না।’
অবৈধ অস্ত্র ও গুলি নিজ হেফাজতে রাখার অভিযোগে ২০০২ সালের ২ জুন রাবেয়া খাতুনসহ তিনজনের বিরুদ্ধে ওই মামলা করা হয়।