জাহালমকে আবু সালেক রূপে চিহ্নিত করার জন্য যে ভুলটি হয়েছে তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে। তবে, তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং অ্যাকাউন্টের ভুয়া ব্যক্তিকে পরিচয় দানকারীরা।
বিনা অপরাধে ভুল আসামি হয়ে জাহালমের তিন বছর কারাভোগ করার জন্য দায়ী কে- এ সংক্রান্ত ২৮ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন আজ বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ এই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি না করে দুদকের আইনজীবী সময় নেন। দুদকের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনের বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী ১৬ জুলাই দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। ওইদিন এ বিষয়ে বিস্তারিত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে দুদকের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে হলফনামা আকারে জমা দেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।
প্রতিবেদনে তদন্তকারীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে আমার নিকট প্রতীয়মান হয়েছে, জাহালমকে আবু সালেক রূপে চিহ্নিত করার জন্য যে ভুলটি হয়েছে তা দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কারণেই ঘটেছে। তবে, তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং অ্যাকাউন্টের ভুয়া ব্যক্তিকে পরিচয় দানকারীরা।
প্রসঙ্গত, সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের করা ৩৩ মামলায় বিনা অপরাধে তিন বছর কারাভোগ করেন টাঙ্গাইলের পাটকলশ্রমিক জাহালম। ঘটনাটি পত্রিকায় প্রকাশের পর একজন আইনজীবী বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি শুনানি শেষে আদালত সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের মামলা (৩৩ মামলা) থেকে জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে সেদিনই মুক্তি দিতে নির্দেশ দেন। ওইদিন রাতেই গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।
গত জানুয়ারিতে একটি পত্রিকায় জাহালমের বিনা দোষে কারাভোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী অমিত দাসগুপ্ত। পরে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন। রুলে জাহালমকে আটক করা কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে, নিরীহ জাহালমের গ্রেফতারের ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি, মামলার বাদী দুদক কর্মকর্তা, স্বরাষ্ট্র সচিবের প্রতিনিধি ও আইন সচিবের প্রতিনিধিকে আদালতে হাজির থাকার নির্দেশ দেন আদালত।
সে নির্দেশ অনুযায়ী ৩ ফেব্রুয়ারি দুদক চেয়ারম্যানের প্রতিনিধি হিসেবে দুদকের মহাপরিচালক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান, মামলার বাদী আবদুল্লাহ আল জাহিদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেন এবং আইন সচিবের প্রতিনিধি সৈয়দ মুশফিকুল ইসলাম আদালতে হাজির হন। শুনানি শেষে আদালত সোনালী ব্যাংকের অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় দুদকের মামলা (৩৩ মামলা) থেকে জাহালমকে অব্যাহতি দিয়ে সেদিনই মুক্তি দিতে নির্দেশ দেন।
ওইদিন রাতেই গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম। আদেশের আগে সেদিন আদালত বলেন, ‘কোনো নির্দোষ ব্যক্তিকে এক মিনিটও কারাগারে রাখার পক্ষে আমরা না। এই ভুল তদন্তে কোনো সিন্ডিকেট জড়িত কি না, সিন্ডিকেট থাকলে কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা চিহ্নিত করে আদালতকে জানাতে হবে। তা নাহলে আদালত এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে। তাছাড়া এ ঘটনায় দুদক কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না।’
অন্যদিকে, জাহালমের ঘটনায় দুদকের গাফিলতি খতিয়ে দেখতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি দুদকের পরিচালক (লিগ্যাল) আবুল হাসনাত মো. আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক। পরে তার সঙ্গে আরও একজন পরিচালককে সংযুক্ত করে নেয়া হয়। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুদকের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে একটি এফিডেভিট দাখিল করে দুদক দাবি করে, জাহালমের ঘটনায় তাদের দায় নেই। অথচ আজ আদালতে দুদকের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার ভুল হয়েছে। তবে, তাদেরকে ভুল পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করেছে ব্র্যাক ব্যাংক ও অন্যান্য ব্যাংকের কর্মকর্তারা এবং অ্যাকাউন্টের ভুয়া ব্যক্তিকে পরিচয় দানকারীরা।