বিএনপির চেয়ারপারসন কারাবন্দী খালেদা জিয়ার জন্য কেরানীগঞ্জের দীঘলিয়ায় অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী ওয়ার্ডে একটি ভিআইপি কক্ষ প্রস্তুত করা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে তাঁকে সেখানেই রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
খালেদা জিয়া এখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলার রায়ে সাজা হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়। পরিত্যক্ত ঘোষিত নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ কারা তত্ত্বাবধায়কের দপ্তরকে তাঁর থাকার উপযুক্ত করে সেখানে রাখা হয়। সেখান থেকে তাঁকে চিকিৎসার জন গত ১ এপ্রিল বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয়।
কারা অধিদপ্তরের একটি সূত্র দাবি করছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ওই কারাগারের একটি কক্ষ খালেদা জিয়াকে রাখার জন্য প্রস্তত করা হয়। ওই কক্ষে জানালার পর্দা লাগানো হয়েছে। তাঁর কক্ষে খাট, টেবিল, চেয়ার, টেলিভিশনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দেওয়া হবে।
কেরানীগঞ্জ কারাগারের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে দক্ষিণ–পশ্চিম পাশে একতলা ভবনে এই কক্ষটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এই একতলা ভবন তৈরিই করা হয়েছে ডিভিশন পাওয়া ভিআইপি বন্দীদের রাখার জন্য।
কারা অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জে রাখা হবে আইন মন্ত্রণালয়ের এমন নির্দেশ পাওয়ার পর তাঁর অন্য মামলার বিচারের জন্য নারী কারাগারের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাস। নারী বন্দীদের কারাগারের বাইরে দেয়াল ঘেঁষে মালামাল রাখার গুদামের একটি অংশকে নিয়ে এই অস্থায়ী এজলাস তৈরি করা হয়েছে। এরই মধ্যে খালেদা জিয়ার মামলার বিচারে সেখানে দুদিন আদালত বসেছে।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখনো ৩৩টি মামলা রয়েছে। দুর্নীতি, যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সহিংসতা, নাশকতা ও রাষ্ট্রদ্রোহ এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে এসব মামলা হয়। এর মধ্যে ১৯টি মামলা বিচারাধীন। ইতিপূর্বে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে।
কারা অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাইকোর্টে কেরানীগঞ্জের আদালতে বিশেষ জজ আদালতের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট করা হয়েছে। সেটার শুনানি এখনো শেষ হয়নি। শুনানির পর যে আদেশ আসবে, সেই অনুযায়ী খালেদা জিয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে কিছুই করা যাচ্ছে না।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্র বলছে, কেরানীগঞ্জে এখন পর্যন্ত কোনো নারী বন্দীকে রাখা হয়নি। কবে নাগাদ নারী বন্দীদের সেখানে রাখা হবে, সেটাও ঠিক হয়নি এখনো। নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বন্দীদের রাখার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এখানে রয়েছে। তবে এখানে গ্যাস–সংযোগ নেই। তাই খালেদা জিয়ার রান্নার জন্য লাকড়ির চুলা বা গ্যাস সিলিন্ডার (এলপিজি) ব্যবহার করতে হবে।
শারীরিকভাবে অসুস্থ খালেদা জিয়াকে তাঁর পছন্দ অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার অনুমতি পেতে বারবার চেষ্টা চালিয়েছেন তাঁর আইনজীবী ও বিএনপির নেতারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিএসএমএমইউতেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। বর্তমানে সেখানে ভর্তি রেখেই তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়াকে কবে কেরানীগঞ্জে নতুন কারাগারে নেওয়া হবে, এই বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা সাপেক্ষে খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জের কারাগারের ভিআইপি কক্ষে নেওয়া হবে।