বরগুনায় চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেলে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পাঁচ দিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু আদালতে রিমান্ড শুনানিতে মিন্নির পক্ষে দাঁড়াননি বরগুনার কোনো আইনজীবী।
মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন অভিযোগ করেছেন, বুধবার সকাল থেকে অনেক চেষ্টা করেও তিনি তার মেয়ের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য একজন আইনজীবী পাননি।
তিনি বলেন, ‘যারা আসামি তাদের বাঁচানোর জন্য এখন এগুলা করতেছে। যার স্বামী মারা গেল, তাকে বাঁচানোর জন্য কী চেষ্টা আমার মেয়ে করছে, সবাই দেখছেন আপনারা। সেই এক নম্বর সাক্ষী আজ কাঠগড়ায়। এমনকি আজ আমার মেয়ের পক্ষে কোনো উকিলও (আইনজীবী) দিতে পারিনি। কেউ যাতে তার জন্য কোর্টে না দাঁড়ায়, সেজন্য বারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনেছি।’
কারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে মিন্নির বাবা বলেন, ‘এলাকার প্রভাবশালী লোকেরা ছাড়া কারা এ কথা বলতে পারে, আপনারা বুঝে নেন। আমি বলতে গেলে কী আমি দেশে থাকতে পারব?’
তবে মিন্নিরি বাবার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান নান্টু। তিনি বলেন, ‘জেলা আইনজীবী সমিতি এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। উনি মিথ্যা কথা বলছেন। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের হয়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আয়শার বাবার সাথে আমার আদালতের বারান্দায় দেখা হয়েছে, উনি তো আমাকে কিছু বলেন নাই এ ব্যাপারে।’
এর আগে মঙ্গলবার দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ।
গত ২৬ জুন স্ত্রীর সামনে রিফাত শরীফকে হত্যার ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। এই মামলার এক নম্বর সাক্ষী ছিলেন মিন্নি।
আলোচিত এই মামলায় বুধবার আরও জিজ্ঞাসাবাদের মিন্নিকে জন্য আদালতে তোলা হয়। বরগুনা অতিরিক্ত জেলা দায়রা জজ আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সঞ্জীব কুমার দাস গণমাধ্যমকে জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাতদিনের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
তিনি বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে জানিয়েছেন, মামলার একজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে মিন্নিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডের আগে মামলার আসামিদের কয়েকজনের সঙ্গে মিন্নির কথোপকথনের একটি কললিস্ট আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সঞ্জীব কুমার দাস।
রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নিয়ে দেশ জুড়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। গত ১৩ই জুলাই রিফাতের বাবা বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ছেলের হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ততা রয়েছে দাবি করে তার গ্রেপ্তার দাবি করেন।পরদিন মিন্নিকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বরগুনায় একটি মানববন্ধনও করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, এ মামলার তদন্তে এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে স্বীকারোক্তির জন্য ১০ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখনো রিমান্ডে রয়েছের তিনজন।
এই মামলার প্রধান আসামি নয়ন বন্ড গত ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।