বাংলাদেশে সংখ্যালঘুর ওপরে নির্যাতনের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রিয়া সাহার দেয়া ব্ক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহ বলে মনে করেন না জানিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, এটা তার ব্যক্তিগত ঈর্ষা চরিতার্থের জন্য করেছে। এত ছোট্ট ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ হয়ে গেছে, তা মনে করি না।
আজ রোববার (২১ জুলাই) বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিচারকদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়ে ট্রাম্পকে যে তথ্যগুলো প্রিয়া সাহা দিয়েছেন তা সর্বৈব মিথ্যা, বিএনপি-জামায়াতের সময় ছাড়া বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। এটা তার ব্যক্তিগত ঈর্ষা চরিতার্থের জন্য করেছে। এত ছোট্ট ঘটনায় রাষ্ট্রদ্রোহ হয়ে গেছে, তা মনে করি না।
আইনমন্ত্রী মনে করেন, ‘প্রিয়া সাহাকে এত গুরুত্ব না দিয়ে শুধু সত্যটাকে তুলে ধরে বাকিটুকু ইগনোর করলেই ভালো হয়। প্রিয়া সাহার দেয়া বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহী হয়ে গেছে এটা বোধহয় ঠিক না; তবুও স্বাধীন বিচার বিভাগে বিজ্ঞ বিচারকরা যেটা মনে করবেন সেটা করবেন।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রিয়া সাহার বক্তব্য দেয়ার পরে শুধু হিন্দু সম্প্রদায় না সবাই বলেছে যে বাংলাদেশে আমরা সবাই সম্প্রীতির মাধ্যমে বসবাস করছি। যদি ইতিহাসও ঘাটা হয় তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের মাটিতে সবচেয়ে কম ধর্মীয় সংঘাত হয়েছে। বাংলাদেশ হওয়ার পরে এরশাদ সরকারের সময়ে একটা হতে গিয়েছিল। এ ছাড়া কিন্তু কেউ উদাহরণ দিতে পারবে না যে, এখানে কোনো ধর্মীয় সংঘর্ষ হয়েছিল। হ্যাঁ, আর একটা ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় এসেছিল তখন তারা কিছুটা এসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিল এবং সেগুলোর বিচার কি হচ্ছে?’
বরগুনার মিন্নির বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সংবিধানে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলা আছে যে, একজন আসামিরও একজন আইনজীবী রাখার অধিকার আছে। সেই ধারাবাহিকতায় যেসব মামলায় মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দেয়া যেতে পারে সেখানে আমরা রাষ্ট্রীয় ডিফেন্স দিয়ে থাকি। মিন্নির আইনজীবী পাওয়ার অধিকার আছে।’
বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খোন্দকার মূসা খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হকও বক্তব্য দেন।
এর আগে গত শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাতে ফেসবুক লাইভে এসে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন ব্যারিস্টার সুমন। সেদিন তিনি বলেন, ‘আমি তার বিরুদ্ধে অবশ্যই মামলা করব, আপনারা আমার পাশে থাকবেন।’
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) হোয়াইট হাউসে ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার ২৭ ব্যক্তির সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে ১৬টি দেশের প্রতিনিধি অংশ নেন। বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহাও প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান।
প্রিয়া সাহা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭০ লাখ হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান নিখোঁজ রয়েছেন। দয়া করে আমাদের লোকজনকে সহায়তা করুন। আমরা আমাদের দেশে থাকতে চাই।’
এরপর তিনি বলেন, ‘এখন সেখানে ১ কোটি ৮০ লাখ সংখ্যালঘু রয়েছে। আমরা আমাদের বাড়িঘর খুইয়েছি। তারা আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে, তারা আমাদের ভূমি দখল করে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো বিচার পাইনি।’
ভিডিওতে দেখা গেছে, এক পর্যায়ে ট্রাম্প নিজেই সহানুভূতির সঙ্গে এই নারীর সঙ্গে হাত মেলান।
প্রিয়া সাহা আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যকার কথোপকথন প্রকাশ পেলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা জানানো হয়েছে।