অ্যাডভোকেট খলিলুর রহমান:
পুরো নাম পি.এম. সিরাজুল ইসলাম। কিন্তু পাঠক সমাজের কাছে তিনি আইনজীবী সিরাজ প্রামাণিক নামেই পরিচিত। কৃষকের উঠোনে জন্ম নিয়ে সারা শরীরে মাটি-কাঁদার গন্ধ মেখে প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা কৃতিত্বের সাথে শেষ করে ভর্তি হন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথার বাইরে কথা বলার আঁতলেমী থেকে কলেজ জীবনেই সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তার পরিধি আরও বেড়ে যায়। লিখেছেন দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক ডেসটিনি, দৈনিক সকালের খবর, দি ডেইলী সান, দি ডেইলী অবজারভারসহ একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায়। সংবাদ পত্রের সুবাদে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে বিভিন্ন সেমিনারে যোগ দিতে বেড়িয়েছেন সার্কভূক্ত দেশসমূহে। গবেষনার কাজে বেশ কিছুদিন কাটিয়েছেন থাইল্যন্ডের চিয়াং মুই বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে সম্মান ডিগ্রি ও স্নাতকোত্তরে ১০ম স্থান অর্জন করেন। রাষ্ট্র ও রাজনীতি সম্পর্কে জানার প্রবল আগ্রহ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এস.এস ডিগ্রি অর্জন করেন। ‘আইনের অজ্ঞতা ক্ষমার অযোগ্য’- এই প্রবাদকে অনুসরণ করে আইনে স্নাতক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে ২০০৮ সালে আইনজীবী হিসেবে সনদ পান। নিজ জেলা কুষ্টিয়া আইনজীবী সমিতির একজন সদস্য হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করেন। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে সনদ পান পাঠক নন্দিত এ লেখক। আইন গবেষক হিসেবেও রয়েছে বেশ সুখ্যাতি। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে দেশবরেণ্য আইনজ্ঞ প্রফেসর ড. মোঃ শাহজাহান মন্ডল স্যারের তত্ত্বাবধানে একটি বিরল বিষয়ে গবেষণা করে এম. ফিল ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষনার বিষয় ছিল “Right to life and personal liberty in Bangladesh with special reference to extra-judicial killing.” লেখকের এ গবেষনা অভিসন্ধটি গ্রন্থাকারে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীতে শোভা পাচ্ছে। বাংলাদেশের যে কোন জাতীয় দৈনিক সংবাদ খুললেই এ লেখকের আইন বিষয়ক বিভিন্ন ধরণের আর্টিক্যাল পাঠকের চোখে পড়ে। লিখেছেন ২৮টি আইনবিষয়ক গ্রন্থ। পাঠকনন্দিত হয়েছে বইগুলি। বেশ কিছু গ্রন্থ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে রেফারেন্স গ্রন্থ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আইনবিষয়ক কলাম লেখায় ২০১১ সালে পান দৈনিক বাংলাদেশ বার্তা পদক, শিশু অধিকার নিয়ে লেখায় ২০১৫ সালে পান ‘জাতীয় শিশু পদক’ ও মানবাধিকার নিয়ে কলাম লেখায় ২০১৬ সালে পান ‘এজাহিকাফ পারফরমেন্স এ্যাওয়ার্ড’। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো যথাক্রমে-পকেট আইন, আইনে আপনার যত অধিকার, ২১টি আইনের সহজ পাঠ, জমি ক্রয়-বিক্রয় আইন, জমি জমার আইন-কানুন ও আলোচনা, রেজিস্ট্রেশন এ্যাক্ট এন্ড ডিড রাইটিং উইথ মডেল, রিমান্ড আইন, বিয়ে-তালাক-দেনমোহর-যৌতুক ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, সংবাদপত্র বিষয়ক আইন, কমন ক্রিমিনাল প্র্যাকটিস, বীকন এ্যাডভোকেটশীপ গাইড, ফৌজদারী মামলা পিটিশন পদ্ধতি, জামিন, জেরা ও যুক্তিতর্কের কলাকৌশল, দোষ স্বীকারোক্তি, পারিবারিক আইন, জামিন বিষয়ক আইন, লিগ্যাল নোটিশ ও এ্যাফিডেভিট লেখার পদ্ধতি, প্রাত্যহিক জীবনে আইন, উত্তরাধিকার আইন, যৌনাচার-অত্যাচার বনাম আইনগত প্রতিকার প্রভৃতি।
লেখক জানান, জনগণ সচেতন হলেই কেবল জনগণের অধিকার নিশ্চিত হতে পারে। মানুষ যাতে অল্প টাকায় অতি সহজে কিছু মৌলিক আইন সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং নিজেদের অধিকার সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারে তার জন্যই আমার এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। ইংরেজিতে প্রচুর বই থাকলেও বাংলা ভাষায় আইন বিষয়ক গ্রন্থের বেশ অভাব। আবার আইনের মোটা মোটা বই থেকে তা জানা দুঃসাধ্য। ফলে দৈনন্দিন জীবনযাপনের প্রয়োজনীয় আইন-কানুনের সঙ্গে পরিচিতি নেই অনেকেরই। সাধারণ একটি আইন না জানার দরুন সামান্য আইনি সমস্যা সমাধান করতেই নানা বেগ পোহাতে হয়। মামলা-মোকদ্দমায় পড়লে তো কথায় নেই। মামলা মানেই ঝামেলা-এ কথা যে কোন ভুক্তভোগীই জানেন। একজন আইনের ছাত্র হিসেবে সেই থেকে শুধু আইনজীবী হব, তা নয় বরং আইনকে কীভাবে সহজ সরলভাবে উপস্থাপন করা যায় সেই ভাবনা কাজ করে। নিত্য প্রয়োজনীয় আইনগুলো যদি সাধারণ মানুষ জানে তাহলে মামলা মোকদ্দমা নিয়ে ভোগান্তি থেকে অনেকটা রেহাই পাওয়া যাবে। এই চিন্তা থেকে লেখালেখিতে হাত দিই। আমরা এ লেখকের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও লেটেষ্ট এ্যাডভোকেটশীট গাইডের রচয়িতা।