পাঁচ হাজার মামলার বোঝা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাঁধে। এত দিন এ নিয়ে কেউ গা করেনি বলে সংখ্যা বেড়ে গিয়ে এখন সংকট দেখা দিয়েছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, এর ফলে স্থবির হয়ে গেছে সরকারের অনেক কার্যক্রম। আর সেই সংকট কাটাতে এবার বেসরকারি আইনজীবী নিয়োগ দিচ্ছে মন্ত্রণালয়। উচ্চ আদালত থেকে আসা এসব মামলায় বিবাদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রধানেরা।
সংশ্লিষ্টদের অভিমত, সময়মতো নজর দিলে এ পরিস্থিতি হতো না। মামলার স্তূপ বেড়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাষ্ট্রের আইনজীবী, আইন শাখার কর্মকর্তারা থাকার পরও এখন বেসরকারি আইনজীবী নিয়োগ দিতে হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, সীমান্ত সুরক্ষা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে প্রতিনিয়ত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে হয়। এসব অভিযানের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলে বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের মামলার মুখোমুখি হতে হয়। বর্তমানে এ ধরনের পাঁচ হাজার মামলা আপিল বিভাগ, হাইকোর্ট ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে। এসব মামলা–মোকদ্দমা যথাযথভাবে পরিচালনা বা সময়মতো পদক্ষেপ গ্রহণের অভাবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আদালতের রায় সরকারের বিপক্ষে গেছে। তাই সরকারি স্বার্থ বিবেচনায় এসব মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে সরকারি আইনজীবীর পাশাপাশি বেসরকারি আইনজীবী নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে এসব মামলা পরিচালনায় সরকারি সহায়তা করার জন্য ১০ জনের একটি বেসরকারি আইনজীবী প্যানেল নিয়োগের জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয় এতে সম্মতি দিয়েছে। ১০ জনের প্রস্তাব থাকলেও আটজনের একটি বেসরকারি আইনজীবী প্যানেল করা হবে। আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর শাখা থেকে বলা হয়েছে, আদালত অবমাননার দায় ব্যক্তির। তাই অবমাননার মামলার ক্ষেত্রে সরকারি খাত থেকে বেসরকারি আইনজীবীর ব্যয় বহন করার সুযোগ নেই।
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তা শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন শাখা বছরের পর বছর ধরে এসব কাজ করেনি। এখন এসে রাষ্ট্রীয় টাকা বাড়তি ব্যয় করে আইনজীবী নিয়োগ দিতে চাইছে। দেখা যাবে নিয়োগের পর আর কেউ কাজ করতে চাইছেন না। আইন শাখার নিজেদেরই এসব কাজ করা উচিত। আর রাষ্ট্রের আইনজীবীরাই–বা কী করছেন? তাঁরা কেন বছরের পর বছর কোনো জবাব দেননি?
যদিও আইন শাখার কর্মকর্তাদের দাবি, আইনজীবী নিয়োগ না করলে এত মামলার জবাব কোনোভাবেই তাঁদের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। এত দিন তাহলে জবাব দেননি কেন—জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, তাঁরা সবাই আইন শাখায় নতুন এসেছেন। আগের প্রায় সবাই বদলি হয়ে গেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে গত ১৯ জুন বৈঠক করেছে। বেসরকারি আইনজীবী নিয়োগে রূপরেখা চূড়ান্ত করতে মন্ত্রণালয়ের আইন শাখার যুগ্ম সচিবকে প্রধান করে কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া আইনজীবী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি আইনজীবীর বয়স ৬০ বছরের বেশি হতে পারবে না, আইনজীবীকে ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করতে হবে। আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। দুই বছরের জন্য আইনজীবী নিয়োগ করা হবে। কোনো আইনজীবী অব্যাহতি চাইলে ৩০ দিন আগে জানাতে হবে। অন্য কোনো মামলায় প্যানেল আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত থাকলে কোনো বেতন–ভাতা বা সম্মানী দেওয়া হবে না। প্রথম আলো