সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার পুরুষ ওয়ার্ডে ঢুকতেই একটি ব্যতিক্রমী দৃশ্যে চোখ আটকে যায়। সেখানকার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে একটি রোগীর বেডের পাশে বসে আছেন দুজন পুলিশ সদস্য।
এ দৃশ্য দেখে স্বাভাবিকভাবে যে কেউ ধারণা করতে পারেন, বেডে শুয়ে থাকা ওই ব্যক্তিও হয়ত পুলিশেরই সদস্য। তাই তাকে দেখতে অন্য পুলিশ সদস্যরা এসেছেন। কিন্তু বিষয়টা আসলে তা নয়।
ওই রোগীর বিছানার কাছে যেতেই দেখা যায়, তার এক হাতে হাতকড়া পরানো। আর অন্য হাতে স্যালাইনের কেনুলা লাগানো। পরে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই রোগী মাদক মামলার আসামি। তাকে গ্রেপ্তারের পরে পুলিশ জানতে পারে, তিনি ডেঙ্গু রোগে আক্তান্ত। তাই তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালে ওই আসামির দায়িত্বে থাকা মোমেন নামের এক পুলিশ সদস্য জানান, ওই রোগীর নাম মো. মাসুম। তিনি একটি মাদক মামলার আসামি। সম্প্রতি পল্লবী থানা পুলিশ তাকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করে। তবে মাসুমকে গ্রেপ্তারের পর তার অসুস্থতা দেখে পুলিশ হাসপাতালে নেয়। এরপর জানা যায়, তিনি ডেঙ্গু রোগে আক্তান্ত।
চিকিৎসাধীন মাসুম জানান, চারদিন আগে একটি মাদক মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসার জন্য তাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তির সময় তার অবস্থা অনেক বেশি খারাপ ছিল। তখন রক্তে প্লাটিলেট ছিল মাত্র ২২ হাজার। বর্তমানে তার শরীরে রক্তের প্লাটিলেট ৫৪ হাজার।
চিকিৎসকরা ছাড়পত্র দিলে আবারও তাকে থানায় নেওয়া হবে বলেও জানান মাসুম।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডেঙ্গু আক্তান্ত মাসুমের পাশে স্বজনদের মতোই দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশ সদস্যরা। তাকে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া-আসাসহ সব কাজই করছেন তারা। আর সেই আসামি রোগীকে আশপাশের লোকজন একটু পরপরই উৎসুক দৃষ্টিতে দেখছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গত ২৭ জুলাই পর্যন্ত অন্তত ১০ হাজার ৫২৮ জন মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। গত বছর সেই সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ১৪৮ জন। গত ১৮ বছরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি হয়েছে মাত্র দুবার। এর আগে ২০০২ সালে রোগীর সংখ্যা ছিল ছয় হাজার ২৩২ জন।
বিভিন্ন হাসপাতালের সূত্র মতে, এ বছর ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দাবি, ডেঙ্গু জ্বরে মৃতের সংখ্যা আটজন।