ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার বিচারক ও ফেনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালের বিচারক মামুনুর রশীদ বলেছেন, মানুষের কল্যাণের জন্যই সমাজ, রাষ্ট্র, আইন ও বিচার ব্যবস্থার সৃষ্টি। আইন ও বিচার ব্যবস্থা এবং আইনের শাসনের পূর্বশর্ত হচ্ছে মানবাধিকার বাস্তবায়ন। একটি দেশে মানুষের অধিকার ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করণে আইনের ছাত্র ও আইনঙ্গনের মানুষের ভূমিকা অপরিসীম। তাই এখন থেকে মনস্তাত্ত্বিক অঙ্গীকারের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।
ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) “হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড অ্যাক্সেস টু জাস্টিস: বাংলাদেশ প্রেক্ষিত” শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় তিনি আইনের শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এর জন্য ফেনী ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ফেনীর আদালতে গিয়ে বিচারিক কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করে শেখার সুযোগ করে দেয়া হবে হবে বলেও জানান।
ফেনী ইউনিভার্সিটির উপাচার্য, বিশিষ্ট মৎস্য বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. মো. সাইফুদ্দিন শাহ’র সভাপতিত্বে বিচারক মামুনুর রশিদ গেস্ট অব অনার হিসেবে সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ও ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের উপদেষ্টা অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান। তিনি বলেন মানবাধিকার বিশ্বজনীন। এই মানবাধিকার অর্থ মানুষের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকারগুলোসহ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য স্বীকৃত বিভিন্ন অধিকার। জন্মগত ও প্রকৃতিগতভাবে সেসব অধিকার মানুষের স্বাভাবিকভাবে ভোগ করার কথা। এবং রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
অধ্যাপক এবিএম আবু নোমান আরো বলেন, “আমেরিকা, ইউরোপ ও আফ্রিকায় মানবাধিকার রক্ষায় আলাদা আঞ্চলিক আইন আছে। কিন্তু এশিয়া মহাদেশে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের বসবাসের কারণে এখানে মানবাধিকার রক্ষার জন্য আলাদা কোনো আইন নেই। তবে সার্কভুক্ত দেশ সমূহকে নিয়ে একটি আইন করা যেতে পারে।”
সেমিনারের মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করতে গিয়ে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান আইন ও বিচার ব্যবস্থা প্রায় দু’শ বছরের পুরোনো। বৃটিশরা যে আইন করে গেছেন তার অনেকটাই এখনো রয়ে গেছে। তাই যে সব আইন ও বিচার ব্যবস্থা বর্তমানের সঙ্গে খাপ খায় না সেগুলো সংশোধন করার সময় এসেছে। এছাড়া বিচার প্রক্রিয়া আগের মতো নথির মাধ্যমে না রেখে সেগুলো ডিজিটাল করা প্রয়োজন। এর মধ্য দিয়ে বিচারিক কর্যক্রম গতিশীল হবে। মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে আরো বেশি সহায়ক হবে।
সেমিনারে ফেনী ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের নির্বাহী কমিটির সদস্য সচিব ডা. এ এস এম তবারক উল্যাহ চৌধুরী বায়েজিদ, ট্রেজারার প্রফেসর তায়বুল হক, রেজিস্ট্রার এ এস এম আবুল খায়ের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের প্রভাষক সুরাইয়ার সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও আইন বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান।
এছাড়া আইন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আয়াতুল্লাহ, ব্যবসায়ে প্রশাসন অনুষদের চেয়ারম্যান ও চেয়ারম্যান কমিটির আহ্বায়ক সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবুল কাশেম অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।