বরগুনায় রিফাত হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি আগামীকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত মুলতবি করেছেন হাইকোর্ট।
আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) দুপুর ২টা ৪০ মিনিটের দিকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে মিন্নির জামিন আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। আদালত আংশিক শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন।
আদালতে মিন্নির পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না।
এর আগে গত ৮ আগস্ট মিন্নির পক্ষে করা জামিন আবেদনের ওপর শুনানি হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়।
সেসময় মিন্নির জামিনের আবেদনের শুনানি নিয়ে জামিন না দিয়ে জামিন প্রশ্নে রুল জারি করতে চান আদালত। আদালত বলেন, ‘জামিন দিতে হলে আগে এ মামলার ১৬৪ ধারায় দেয়া জবানবন্দিগুলো দেখতে হবে। তাই আমরা আজ শুধু রুল জারি করতে পারি। আপনারা ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নিয়ে আসুন।’
মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না এ সময় আবার মিন্নির জন্য জামিন প্রার্থনা করলে আদালত তাকে বলেন, ‘আমরা এখন রুল দিতে পারি, অন্যথায় আপনারা আবেদনটি ‘টেক ব্যাক’ করতে পারেন।’
তখন মিন্নির আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘ওকে, আমরা জামিন আবেদনটি ‘টেক ব্যাক’ (ফেরত নিচ্ছি) করছি।’
জামিন আবেদন হাইকোর্ট থেকে ফেরত নেয়ার ১০ দিন পর আজ রোববার মিন্নির আইনজীবীরা নতুন বেঞ্চে যান। বিচারপতি এম.ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে জামিন আবেদনটি উপস্থাপন করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম।
এর আগে গত ৮ আগস্ট আদালতে মিন্নির জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তাদের সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট জেসমিন সুলতানা, আইনুন নাহার সিদ্দিকা, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম ও জামিউল হক ফয়সাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম।
গত ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে রিফাত শরীফকে। তার স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি হামলাকারীদের সঙ্গে লড়াই করেও তাদের দমাতে পারেননি।
গুরুতর আহত রিফাতকে ওইদিন বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও পাঁচ-ছয়জনকে অজ্ঞাত আসামি করে বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
গত ১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরসহ মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এরপর ১৭ জুলাই বিকেল ৩টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নিকে হাজির করে সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী।
গত ২২ জুলাই বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে ওইদিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর ৩০ জুলাই ফের জামিন আবেদন করেন মিন্নি। এ আবেদনও নামঞ্জুর করেন আদালত।
আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে মিন্নিসহ ১৫ জন অভিযুক্তই রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। যদিও পরবর্তীতে মিন্নি তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করতে চেয়েছিলেন। তবে আদালত তা মঞ্জুর করেননি।
এ মামলার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। এছাড়া এ মামলার এজাহারভুক্ত চার আসামি এখনও পলাতক।