ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা নিধনে দায়িত্বরতরা সঠিকভাবে কাজ করছে না বলে বলেছেন হাইকোর্ট। একই সময় হাইকোর্ট বলেন, নিজেরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে জনগণের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে। জনগণকে তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করতে বলা হচ্ছে। সত্যিকারে যেখানে এডিস মশা থাকে সেখানে ওষুধ ছিটালেইতো হয়। জনগণকে সচেতন হতে হবে -এটা ঠিক। কিন্তু সব দায় জনগণের -এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
মশা নিধনের দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, ডেঙ্গু মশার লার্ভা ও ডিম থাকে পানিতে। উনারা সেটা পরিষ্কার না করে রাস্তায় ময়লা ফেলে পরিষ্কার করলেন। এটা নেহায়েতই হাস্যকর।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া রোগীর সংখ্যা নিয়ে দু’রকম তথ্য কেন? এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চান হাইকোর্ট। দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী মারা যাওয়ার সংখ্যা কত তার তথ্য নিয়ে হাইকোর্ট প্রশ্ন তোলে এমন মন্তব্য করেন।
এর আগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের নেয়া কার্যক্রম হাইকোর্টকে জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। ডেঙ্গু প্রতিরোধের বিষয়ে হাইকোর্ট নতুন করে কোনো আদেশ না দিলেও ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেন, দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যথা সময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। এটা নিলে হয়তো এ রকম পরিস্থিতি হতো না। যাদের সঠিকভাবে বিষয়টি তদারকি করার দায়িত্ব ছিল তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেননি। তাদের মানসিকতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে।
ডেঙ্গু মশা নিধন ও ওষুধ নিয়ে রোববার (১৮ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
আদালতের শুনানিতে আজ (রোববার) রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) ব্যারিস্টার এবিএম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট সাইফুল আলম।
শুনানিতে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কতজন মারা গেছে তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় দুই রকম তথ্য দেখছি। সরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৪৮ জন। কিন্তু বেসরকারি হিসাবে বলা হচ্ছে ৭২ জন। এটা নিয়ে দুই রকম তথ্য কেন?
এ প্রশ্নের জবাবে ডিএজি ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল বাশার মাহমুদ বলেন, সরকারি হিসেবে ৪৮ জন। যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তাদের কারো কারো অন্য রোগ থাকতে পারে। কারো হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই এটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার বিষয়।
এ সময় আদালত বলেন, ধরে নিচ্ছি ৪৮ জনই মারা গেছে। যারা মারা গেছে তাদের পরিবারের কী অবস্থা তা একবার ভেবে দেখুন। ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। যথা সময়ে যদি প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়া হতো তাহলে হয়তো এত লোককে মরতে হতো না। শরীয়তপুর থেকে একজন ঢাকায় সেবা দিতে এসে মারা গেছে। সে যদি গ্রামে থাকতো তাহলে হয়তো তাকে মরতে হতো না।
আদালত বলেন, আমরা গত ফেব্রুয়ারিতে সতর্ক করেছিলাম। দুই সিটির সচিবকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। কিন্তু আমাদের আদেশের পর দুই সিটির কর্তাব্যক্তিদের কাছ থেকে যে ধরনের কথাবার্তা শুনলাম তা কারো কাম্য নয়। ডেঙ্গু এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সরকার বা দুই সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়নি। ডেঙ্গু মশার লার্ভা ও ডিম থাকে পানিতে। উনারা সেটা পরিষ্কার না করে রাস্তায় ময়লা ফেলে পরিষ্কার করলেন। এটা নেহায়েতই হাস্যকর।
আদালত বলেন, কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বছরের পর বছর একই ওষুধ ছেটানো হচ্ছে। অথচ ওই ওষুধে কাজ হচ্ছে না। একটি ওষুধ বার বার ব্যবহার করলে তা সহনীয় হয়ে যায়। এটা বুঝতে হবে। দেখুন না, এখন অ্যারোসল আর ঠিক মতো কাজ করে না। এ সময় একজন আইনজীবী বলেন, অ্যারোসলে মশা মরে না।
এর আগে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেয়া প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করতে গেলে আদালত বলেন, আমরা তো কোনো রুল জারি করিনি। আরেকটি আদালত রুল দিয়েছে। সেখানে রিপোর্ট দিন। এ সময় ডিএজি বলেন, এ আদালত মৌখিকভাবে এক আদেশে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ জানতে চেয়েছিলেন। তাই সরকার বিষয়টি জানিয়েছে।
তিনি তখন সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, সরকার এটা নিয়ে খুবই আন্তরিক। সকল সরকারি হাসপাতালে সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বিদেশ থেকে ওষুধ আমদানিতে শুল্ক মুক্ত করা হয়েছে। ১০টি সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ৪০টি হাসপাতালে ভ্রাম্যম্যাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। যেসব হাসপাতাল সরকারি নির্দেশনা অমান্য করেছে তাদের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এ সময় আদালত বলেন, এটা নিয়ে আমরা কোনো আদেশ (রুল) দিচ্ছি না।