পঞ্চগড়ে কারা হেফাজতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আইনজীবী পলাশ কুমার রায়ের মৃত্যু আত্মহত্যা—বিচারিক তদন্তে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বুধবার (২১ আগস্ট) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘অ্যাপারেন্টলি দিস ইজ দ্য কেস অফ সুইসাইড’ (আপাতভাবে এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে ধারণা করা হচ্ছে)।
আদালতে প্রতিবেদনের অংশবিশেষ পড়ে শোনান রিট আবেদনকারী আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক।
প্রতিবেদনে পঞ্চগড় কারাগারে গ্যাস লাইটারের অবাধ ব্যবহার, অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকা, কারাগারের ভেতরে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা না থাকা, কারাগারে জেল সুপার না থাকা, কারা হাসপাতালে ডিপ্লোমা নার্সের দায়িত্ব পালন ও একটি খুনের মামলার আসামিকে দিয়ে সার্জিক্যাল বিভাগের দায়িত্ব পালন করানোর দিকগুলো উঠে আসে।
শুনানিতে প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আইনজীবী বলেন, পলাশের গায়ে আগুন লাগার ২৪ ঘণ্টা পর তাঁর চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করা হয়। দাপ্তরিক ও আনুষঙ্গিক কাজের জন্য অনেকটা সময় যায়।
শুনানি নিয়ে আদালত এই বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্রসচিব ও আইজি প্রিজন বরাবর পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছেন। পঞ্চগড় কারাগারে নিরাপত্তা ও কারা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়ে যে অভিযোগ বিচারিক প্রতিবেদনে এসেছে, সে ব্যাপারে এই দুই কর্মকর্তাকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ১৫ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পঞ্চগড় কারাগারে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর হাসপাতালে আইনজীবী পলাশের মৃত্যুর ঘটনায় বিচারিক তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে গত ৬ মে রিটটি করেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৮ মে হাইকোর্ট পলাশ কুমার রায়ের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করতে পঞ্চগড়ের মুখ্য বিচারিক হাকিমকে নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ তদন্ত প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত আইনজীবী পলাশ জেলার আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের বড়সিংগিয়া গ্রামের প্রণব কুমার রায়ের ছেলে।
জানা যায়, তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিষ্ঠানের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গত ২৫ মার্চ দুপুরে মানববন্ধন করার সময় প্রধানমন্ত্রীর নামে পলাশ কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। রাজীব রানা নামে এক তরুণ তার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। পরে তাকে আটক করে ২৬ মার্চ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৬ এপ্রিল কারা হাসপাতালের বাথরুমে অগ্নিকাণ্ডের শিকার হন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। গত ৩০ এপ্রিল দুপুরে চিকিত্সাধীন অবস্থায় পলাশ মারা যান।