মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর খবর আদালতকে অবহিত করেছেন তার আইনজীবী।
সোমবার (২৬ আগস্ট) নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত (অস্থায়ী) ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ শরীফ এ এম রেজা জাকেরকে অবহতি করেন তার আইনজীবী আব্দুর রশিদ।
এছাড়াও মামলার অপর আসামি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফের মৃত্যুর খবরও আদালতকে অবহিত করা হয়েছে। আদালত এ বিষয় পুলিশকে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।
এরশাদের পক্ষের আইনজীবী আব্দুর রশিদ আদালতকে বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ গত ১৪ জুলাই মারা গেছেন। তাকে রংপুরে দাফন করা হয়েছে। মৃত মানুষের বিরুদ্ধে মামলা চলতে পারে না। তাই মামলার দায় থেকে তার অব্যাহতি চাচ্ছি।
অপরদিকে আবদুল লতিফের আইনজীবী বলেন, মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ কিছু দিন আগে মারা গেছেন। তাকে বনানীর সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মামলার দায় থেকে তার অব্যাহতি চাচ্ছি।
এদিন মামলার অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য ছিল। তবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তা দাখিল করেনি। এজন্য আদালত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ২ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
২০১৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আসাদুজ্জামান খান রচি মামলাটি অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন।
আবেদনের শুনানিতে তিনি বলেন, এ মামলায় সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি। ফলে আরও অনেককে সাক্ষী করা যায়নি। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে মামলাটির অধিকতর তদন্ত প্রয়োজন।
আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দেন।
১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক সেনা অভ্যুত্থানে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হন। তখন চট্টগ্রামে অবস্থিত সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার স্টাফ (জিওসি) ছিলেন আবুল মঞ্জুর।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর আত্মগোপনে যাওয়ার পথে মেজর জেনারেল মঞ্জুরকে আটক করে পুলিশ। এরপর ওই বছরের ২ জুন তাকে পুলিশ হেফাজত থেকে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং মৃত্যুর সনদপত্র পেতে দেরি হওয়ায় ঘটনার ১৪ বছর পর ১৯৯৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি মঞ্জুরের ভাই আইনজীবী আবুল মনসুর আহমেদ চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা করেন। ১৯৯৫ সালের ২৭ জুন এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদসহ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
দীর্ঘ ১৯ বছর মামলাটি বিভিন্ন কারণে ঝুলে ছিল। বিচার চলাকালে পর্যায়ক্রমে ২২ বিচারক বিচারিক কার্যক্রমে নিয়োজিত ছিলেন। বিভিন্ন কারণে তারা সবাই বদলি হন।
২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি মামলার ২৩তম বিচারক ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হোসনে আরা আক্তার ওই বছর ১০ ফেব্রুয়ারি আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এ মামলার কার্যক্রম শেষ হয়। ওই সময় মামলার প্রধান আসামি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত সদ্য প্রয়াত এইচএম এরশাদ ও বাকি দুই আসামি মেজর (অব.) কাজী এমদাদুল হক ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মোস্তফা কামাল উদ্দিন ভূইঞা উপস্থিত ছিলেন।
মামলার চার্জশিটভুক্ত অপর দুই আসামি মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল লতিফ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) শামসুর রহমান শমসেরের বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত থাকে।
মামলায় মোট ৪৯ সাক্ষীর মধ্যে ২৮ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার পর ২০১২ সালের ২ অক্টোবর আত্মপক্ষ সমর্থন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন প্রধান আসামি সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ। এর সমর্থনে আদালতে লিখিত বক্তব্যও দাখিল করেন তিনি।