কুমিল্লার আদালতে বিচারকের খাস কামরায় ফারুক নামে হত্যা মামলার এক আসামিকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার একমাত্র আসামি মো. হাসানকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি’র পরিদর্শক প্রদীপ মণ্ডল সোমবার (২৬ আগস্ট) ওই আসামির বিরুদ্ধে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং-১ এ চার্জশিট দাখিল করেন।
আদালত ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ই জুলাই কুমিল্লা আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতে জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের হাজী আবদুল করিম হত্যা মামলার হাজিরা দিতে আসে ওই মামলার দুই আসামি জেলার লাকসাম উপজেলার ভোজপুর গ্রামের শহিদুল্লাহর ছেলে মো. হাসান এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার কান্দি গ্রামের অহিদুল্লাহর ছেলে মো. ফারুক। এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলাকালে ওইদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসামি হাসান তার সহযোগী একই মামলার আসামি মো. ফারুককে প্রকাশ্য আদালতে বিচারকের সামনে আকস্মিকভাবে ছুরিকাঘাত করে। একপর্যায়ে আত্মরক্ষার্থে ফারুক বিচারকের খাস কামরায় ঢুকে পড়লে সেখানে তাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে রক্তাক্ত জখম করে। পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জেলার বাঙ্গুরা বাজার থানার এএসআই ফিরোজ আহম্মেদ ঘাতক হাসানকে রক্তমাখা ছুরিসহ আটক করেন। তিনি ঘটনার বাদী হয়ে ওইদিন রাতে ঘাতক হাসানের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে মামলাটি ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রদীপ মণ্ডল জানান, মামলাটি ডিবিতে স্থানান্তরের পর দীর্ঘ ৪৩ দিনের মাথায় একমাত্র আসামি হাসানকে অভিযুক্ত করে সোমবার বিকালে কুমিল্লার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত নং-১ এর বিচারক মো. জালাল উদ্দিন এর আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, ২০১৩ সালের ২৬শে আগস্ট সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মনোহরগঞ্জের কান্দি গ্রামের হাজী আব্দুল করিম। এ ঘটনায় আব্দুল করিমের দ্বিতীয় স্ত্রী সাফিয়া বেগম বাদী হয়ে ফারুক ও হাসানসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরো ২-৩ জনের বিরুদ্ধে মনোহরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় হাসান ও তার অপর দুই ভাই মিজান ও নুরুজ্জামানকেও আসামি করা হয়। এ মামলায় হাসান ও তার দুই ভাইকে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলে ফারুক ও মামলার বাদীর পরিবারের সঙ্গে ঝগড়া-মারামারি হয়। এ ছাড়া ফারুকের বাবা অহিদুল্লাহ এ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে পলাতক থাকায় মামলাটি নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয় বলে হাসানের ধারণা এবং মামলার খরচ চালাতে হিমশিম খেয়ে হাসানের মাঝে ক্ষোভ-হতাশার সৃষ্টি হয়। সেই ক্ষোভ থেকে হাসান হাজিরা দিতে আসার সময় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ধারালো ছুরি সঙ্গে নিয়ে আদালতের ভেতরে প্রবেশ করে এবং সেখানে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে ফারুককে হত্যা করে।