নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতাকে বিশ্বব্যাপী সমস্যা বলে আখ্যায়িত করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, ‘আমাদের বর্তমান সমাজে নারী ও শিশু পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন দ্বারাও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সবাইকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। নারী ও শিশুর অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সংবেদনশীল।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে সোমবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় ‘নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত’ শীর্ষক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সাউথ এশিয়ান ল’ইয়াস ফোরাম (এসএএলএফ) সম্মেলনের আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি সভাপতি শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ এতে সভাপতিত্ব করেন।
সেমিনারে প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সব সময় নারী ও শিশুর প্রতি সংবেদনশীল। বাংলাদেশের উচ্চ আদালত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি রোধ এবং এ ধরণের অপরাধের বিচারের সম্ভাব্য প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছে। এটা প্রত্যাশিত দেশের সকল প্রতিষ্ঠান উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুসরণ করবে।
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘নারী ও শিশুর প্রতি যথাযথ সম্মান ও নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে না পারলে সত্যিকারের শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক সমাজ হবে না। আমাদের সম্মিলিত চেষ্টা ন্যায়বিচার প্রাপ্তি ও আইনের শাসনের পথ সুগম করতে পারে। মনে রাখতে হবে কোথাও অবিচার করা হলে তা সবখানের ন্যায়বিচারের জন্য হুমকি। ’
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা ছিলেন বিচারপতি নাইমা হায়দার। নারী ও শিশু নির্যাতনের খবর প্রতিদিনই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে জানিয়ে বিচারপতি নাঈমা হায়দার বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, পরিবারের সদস্য ও পরিচিত লোকজনের হাতেই নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। নির্যাতনের শিকার হওয়ার পরও বহু নারী নির্যাতনের কথা প্রকাশ করেন না।
নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচারে বিদ্যমান আইন, নির্যাতন বন্ধে উচ্চ আদালতের নজির তুলে ধরেন বিচারপতি নাঈমা হায়দার। তিনি বলেন, ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুদের শারীরিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে অবমাননাকর ‘টু-ফিঙ্গার টেস্ট’-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে উচ্চ আদালতের একাধিক রায় রয়েছে। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
ভুক্তভোগী নারীদের অনেকে আপত্তিকর জেরার সম্মুখীন হন জানিয়ে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এফ হাসান আরিফ বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রুত নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য মামলাগুলোর ভালো তদন্ত, ভালো প্রসিকিউশন ব্যবস্থা জরুরি। দরকার সমন্বয়।
নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা জরুরি বলে মন্তব্য করেন সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম আমিনউদ্দিন। সেমিনারে তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলায় অপরাধীর শাস্তি হলে অন্য অপরাধীরা সতর্ক হবে। সমাজের কাছে একটি বার্তা যাবে যে অপরাধ করলে রেহাই নেই।
সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ কে এম ফয়েজ, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক বশির আহমেদ, মমতাজ উদ্দিন মেহেদী, আইনজীবী আবদুন নুর দুলাল, শাহ মঞ্জুরুল হক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, শেখ সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং ভারতের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী চিতরাঞ্জলি নেগি।